নিউজপিডিয়া ডেস্ক: আধার কার্ডের বৈধতার প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একাধিক রিভিউ পিটিশন দাখিল হয়েছে। ৯ জুন অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবার থেকে সেই পিটিশনগুলির শুনানি চলবে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে।
২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আধারকে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা ঘোষণা করেছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। সেই রায়ে বলা হয়েছিল, গরিব এবং প্রান্তিক মানুষদের বৃহত্তর স্বার্থে আধার খুব সামান্য তথ্যই সংগ্রহ করছে। যাঁরা বিভিন্ন সরকারি সুবিধা এবং ভর্তুকির ক্ষেত্রে আধার ব্যবহার করতে পারবেন। সরকারও সেই যুক্তিকেই প্রাধান্য দিয়েছিল। স্কুল-কলেজে ভর্তি, অফিস, ব্যাঙ্ক খাতা খোলা, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি কানেকনশনের সময় আধার বাধ্যতামূলক নয়- এমনই বলা হয়েছিল ৪ মাস ধরে চলা শুনানির পর দেওয়া রায়ে।
তবে আধার নিয়ে আইনি লড়াই দীর্ঘদিনের। ব্যক্তিগত তথ্য লিক হওয়ার অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে আধার প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। পরে ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার আধার বিলকে অর্থবিল হিসেবে লোকসভায় পেশ করে এবং সংখ্যাধিক্য থাকায় সহজেই সেটি সংসদের নিম্নকক্ষে পাশ করিয়ে নেয়। পরে বিলটিকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়েছিল সুপারিশের জন্য। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের উচ্চকক্ষ অর্থবিলের ক্ষেত্রে কেবল পরামর্শ দিতে পারে। তবে লোকসভা সেই সুপারিশ গ্রহণ করতে বাধ্য নয়। আর রাজ্যসভার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেও অর্থবিল পাশ করানো যায়।
বিরোধীদের অভিযোগ, আধার সংক্রান্ত বিল নিয়ে লোকসভায় পাশ হলেও রাজ্যসভায় বিজেপি সরকারের হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যা না থাকায় রাজ্যসভাকে এড়ানোর জন্যই কেন্দ্রের মোদী সরকার আধার বিলকে অর্থবিল হিসেবে পেশ করেছিল। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আধার বিলকে অর্থবিল হিসেবে পাশ করানোর বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল।
পরে আধার সংক্রান্ত মামলায় ২০১৭ সালের অগাস্টে সুপ্রিম কোর্টের ৯ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সংবিধানের ২১ ধারা অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করে। ওই রায়টিকে আধারের বিরোধিতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে বলা হয় আধারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় নজরদারি চালানো সম্ভব।
যদিও পরের বছরই আধারকে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দিয়েছিল দেশের সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই রায়টিতে বেঞ্চের ফল ছিল ৪:১। ভিন্নমত পোষণ করে বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় জানিয়েছিলেন, আধার আইনকে অর্থবিল পেশ করা যাবে না এবং সেটা পাশ করানো হবে সংবিধানের সঙ্গে ‘প্রতারণা’।
প্রসঙ্গত, আধার সহ আরও কয়েকটি নির্দিষ্ট আইনকে অর্থবিল হিসেবে পাশ করানোর বিষয়টি নিয়ে একটি ভিন্ন মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্টের ৭ সদস্যের বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ।