(রম্য রচনা) ছাগলটা আবার ঘরে ঢুকলো: সবুজ বিশ্বাস
ছাগলটা আবার ঘরে ঢুকলো
সবুজ বিশ্বাস
ঘরে থাকার বান্দা আমি নই। কি শীত, কি গ্রীষ্ম বা বর্ষা। কাজেকর্মে তো বেড়াতেই হয়। নাহলে আড্ডাতে যাওয়া চাই-ই। যদি না জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোনো ব্যামোতে না ধরে। ব্যামো নিয়েও সুযোগ করে একবার সদরঘাট যেতেই হবে। আমার বাহিরেই অধিক সময় কেটে যায়৷ বউ ও মেনে নিয়েছে বা বাইরে থাকলেই হয়ত ওর সুবিধা। ফলে, যেখানেই থাকি বা যতক্ষণ থাকি গৃহমন্ত্রীর কোনো চাপ নেই। ইদানিং ঘর বন্দী। তবে, পেশাগত কারণে, আমাকে কখনো সখনো বাইরে বেড়াতে হয়। শুনে অনেকে ভ্রু কুঁচকে বলেন, সেকি বাইরে বেড়ান কেন?
উত্তরে বলি খবর সংগ্রহ করা আমার কাজ। এটা শোনার পর বলেন, ও আচ্ছা, তবে খুব সাবধানে থাকবেন।
এমনই সতর্কবাণী শোনার পর, এক বন্ধুকে বললাম, চিন্তা করবেননা। আমার কিছু হবেনা। কারণ, তিন সপ্তাহ যখন, ২৪ ঘণ্টায় বাড়িতে কাটাতে পেরেছি তখন আর কিছুতেই ছুতে পারবেনা৷ এসব শুনে বন্ধুটি হাসলো। আশাকরি উনি আমার ইশারাটি বুঝেছেন। কারণ, উনিও একজন গৃহবধূ।
এই করেই কাটছে। ভাবছিলাম এই ফাঁকে রান্নাবান্নার কাজে বউকে যথাসম্ভব সাহায্য করার ফাঁকে ফাঁকে রান্নাটাও একটু শিখে নেবো। কিন্তু, যেদিন থেকে চা বানাতে শিখেছি, বউকে এক কাপ চা দিতে বললেই বলে, কেন করে নাও, জানোনা নাকি আমার আশায় বসে থাকছো। দেখছোনা আমি এইমাত্র সিরিয়াল দেখতে বসলাম। রাতে ওদের কার্টুন দেখার জ্বালায় দেখা হয়নি। এখন না দেখলে আর রিপিট হবেনা।
সেদিন থেকে আমি আর ভয়ে রান্না ঘরে ঢুকিনি। কি জানি রান্না শিখলেই হয়ত বলবে, রেঁধে খাও। তাছাড়া রাগ করে যে হোটেল বা রেষ্টুরেন্টে যাবো তারও উপায় নেই। ফলে, চুপচাপ ঘরে বন্দি হয়ে লেখালেখি আর সময় কাটাতে ছবি আঁকি। এই দুটো কাজেই তো বটেই, অন্য সময়েও ঘরে চেঁচামেচি আর ঝঞ্জট ঝামেলা আমার পছন্দ নয়। কিন্তু, নিজ কাজে বিরক্ত হয়ে বা হঠাৎ আমার বউয়ের বাজখাই গলায় পড়িকি মড়ি করে উঠে গিয়ে দেখি, ও কিছুনা একটা আরশোলা পজিশন নিচ্ছিল। আমি তখন বউকে বলি কই, বাঘটা কোন দিকে গেল? বাঘ তো না অন্য কিছু? যাক আবার এসে নিজ কাজে বসি।
কিন্ত, আমার দুই দুষ্টুতে কখনো কার্টুনের জন্য টিভির দখল বা মোবাইল দখলে রাখতে শুরু করে তাণ্ডব৷ ছোটোর হাবভাব এমন যেন ও হেড মিস্ট্রেস। বড়ও রেগে যায়, শুধু তোরই হুকুম চলবে? আমি তখন বিরক্ত হয়ে বলি, আহঃ! কি হচ্ছেটা কী? সঙ্গে সঙ্গে বউ কাঁসর ঘণ্টার মতো বেজে ওঠে বলে, ঘরে ছোটো ছেলেপুলে থাকলে চেঁচামেচি হবেনা? আমিও ভয়ে চুপ মেরে যাই, আর কথা বলিনা। আকিন্তু বউ বিড়-বিড় করে বলতেই থাকে, আপদটা যে কবে বিদায় নেবে? মনে ভাবি কথাটা কাকে বলছে করোনা ভাইরাসকে না আমাকে বুঝতে পারিনা।
ওমনি, আজ দরজা ঠেলে যেই ঘরে ঢুকছি, বউ চেঁচাচ্ছে, আবার ছাগলটা এলো, ঘুরে ফিরে শুধু এখানেই। আমি আবার ঠাওর করার চেষ্টা করছি, সত্যি সত্যি ছাগলকে বলছে তো?