অবশেষে স্বাস্থ্য ও সরকারি বিধি মেনেই সিনেমা হল ও স্কুল খোলার নির্দেশিকা জারি হয়। সেই মতন স্কুলের শ্রেণীকক্ষ, চেয়ার টেবিল, বেঞ্চ সব গতকালই স্যানেটাইজড করা হয়। শুক্রবার সকাল ১১টায় দীর্ঘদিন বাদে বেজে ওঠে স্কুল চালুর বেল। নিয়ম অনুযায়ী ছাত্র ছাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্কুলের শ্রেণীকক্ষ। এদিন নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস হয়।
সোমনাথ দত্ত, মালবাজার: করোনা আবহে প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকার পর শুক্রবার থেকেই সরকারি স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশিকা মেনে পঠনপাঠন শুরু হলো ডুয়ার্স এলাকার সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলিতে। তবে প্রথম দিন ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতির হার ছিল সামান্য। করোনা আবহে গত ২৪ মার্চ সমগ্র দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয় হয়। বন্ধ হয়ে যায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোনও। তিনমাস কঠোর ভাবে লকডাউন চলার পর গত জুন মাস থেকে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো। ধীরে ধীরে খুলতে থাকে হাটবাজার, দোকানপাট, যানবাহন অফিস কাছারি ইত্যাদি। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে খুলতে শুরু করে হোটেল, লজ।

এদিন ডুয়ার্স এলাকার একাধিক স্কুলে ঘুরে দেখা গেল উপস্থিতি কম থাকলেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে এক বেঞ্চের দুই প্রান্তে দূরত্ব বজায় রেখে পড়ুয়ারা বসেছে। শিক্ষক শিক্ষিকারা ক্লাস নিচ্ছেন। খুশির আবহ তৈরী হয়েছে ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে।
মালবাজার শহরের সুভাষীনি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ডঃ সমিতা দাস জানালেন, “স্কুলে পড়ুয়াদের কোলাহল না থাকলে স্কুলের রূপ সম্পূর্ণ হয় না। এতদিন আমরা সরকারি অফিসের মতোই কাগজ কলমে কাজ করছিলাম। আজ স্কুল খোলায় ভালো লাগছে। আমরা সরকারি নিয়মবিধি মেনেই স্কুলে আসার পর ছাত্র ছাত্রীদের স্যানেটাইজড করেছি সাথে সকলের মাস্ক রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের পরই ক্লাসে পাঠিয়েছি। স্কুলের সমস্ত শ্রেণীকক্ষগুলো ভালোভাবে স্যানেটাইজড করা হয়েছে। স্কুল খুললেও আমাদের সাবধানে থাকতে হবে এবং সমস্ত দিকেই কঠোরভাবে নজর দিতে হবে।”
একই রকমের অভিমত পাওয়া গেছে শহরের অন্যান্য বিদ্যালয় সহ পার্শ্ববর্তী মেটেলি, চালসা নাগরাকাটা, ওদলাবাড়ির, ডামডিম, বাগরাকোট, বড়দীঘি, লাটাগুড়ি, মৌলানি, বাতাবাড়ি ইত্যাদি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছ থেকে। মালবাজার শহরের বাসিন্দা তথা পেশায় শিক্ষক ধৃতিমান রাহা, সঞ্জয় সুত্রধর প্রমুখ বলেন, “দীর্ঘদিন বাদে স্কুলের পুরোনো পরিবেশে ফিরে পাওয়ায় ভালো লাগছে। ছাত্র ছাত্রীদের কোলাহল আমাদের প্রাণ। আবার ক্লাসরুম ফিরে পাচ্ছি সাথে ছাত্র ছাত্রীদের সামনে থেকে পড়ানোর যে আনন্দ তা পুনরায় শুরু হচ্ছে যা সত্যিই আনন্দের।” এদিন মাল আদর্শ বিদ্যা ভবনের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুবীর চৌধুরী সম্প্রতি প্রয়াত হওয়ায় তার স্মৃতিচারণা করেই আজ স্কুলে ছুটি দেওয়া হয়। তবে আগামী কাল থেকে সরকারি নির্দেশিকা মেনেই ক্লাস হবে বলেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা জানান।
অপরদিকে স্কুল খুলে যাওয়ায় ছাত্র ছাত্রী অভিভাবকদের মধ্যে খুশির আবহাওয়া। মালবাজার শহরের বাসিন্দা উত্তম পাল, সাধন বসাক প্রমুখ বলেন, “স্কুল খোলায় অনেকটাই চিন্তা মুক্ত হলাম। ছেলে মেয়েদের একঘেয়েমি ভাব এবার অনেকটাই কাটবে সাথে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ছাত্র ছাত্রীদের পঠন পাঠন আরও জোরদার হবে।” এদিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেলো নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব থাকলেও সকলের চোখে মুখেই ফুটে উঠেছে বন্ধুদের সাথে পুরোনো দিনের চেনা আমেজ।