বিকাশ দাস (বিল্টু)
আমাদের প্রায় সবার সঙ্গে লেপটে আছে এক বর্ণময় শৈশব। যদিও সবার কপালে তা জোটে না। যাদের জোটে, সত্যিই তারা ভাগ্যবান। বিশেষ করে গ্রামের কিছু লৌকিক সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন; এ এক অনন্য আবেগঘন রেশ। মাটির সঙ্গে লেপটে থাকা জীবন, কিংবা জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ভাঙা স্লেট ,কচুপাতার ছাতা, দাঁড়িয়াবান্ধা, এক্কা-দোক্কা খেলা এইসব।
সে যাই হোক আমরা যদি অতীতে উঁকি মারি, স্রোতের নাওয়ে ভেসে আসবে কিছু আবেগঘন মুহূর্ত। যদিও ‘সময়’ নামক গণ্ডি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে সমস্ত কিছুকে মেপে দিয়েছে। তবুও এই স্মৃতি, এই সংস্কৃতি কচিকাঁচাদের মধ্যে দেখেও নিজের তথা সবার মধ্যেই একটা আলাদা আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। অসম্ভব রকমের সুন্দর স্মৃতিমেদুর অনুভূতি জড়িয়ে ধরে।
কথা হচ্ছে ‘অম্বুবাচি’ বা ‘আমাইত’ প্রসঙ্গে। কথিত আছে এই সময় কালের মধ্যে কৃষকরা নিজেদেরকে মাটির কাজ তথা কোদাল দিয়ে মাটি খনন জাতীয় কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। যদিও পৌরাণিক ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। তেমনি শিশুরাও নিজেদের ব্যস্ত রাখে ছুটির মেজাজে। এই উৎসবের অন্যতম দাবিদার হয়ে এবং নিজেদের জড়িয়ে রাখে একটি সংস্কৃতির অন্যতম ধারক হিসাবে। আনন্দঘন মুহূরর্তের অন্যতম স্মারকরূপে।
সে যাই হোক এবারের এই অম্বুবাচি কিন্তু শিশুরা বেশ সুন্দর ভাবেই কাটাতে পারছে। কারণটা অবশ্যই জানা। করোনা সংক্রমণ ,লকডাউন। স্কুল ছুটি। এ যেন এক দেদার সফর। তবে এর প্রচলনটা কিন্তু গ্রামের দিকেই খুব বেশি। শিশুরা নিজেরাই বাঁশ কেটে গ্রামের তুলনামূলক ছোট রাস্তাগুলোয় ব্যারিকেড (বাঁশের/ দড়ির) দিয়ে চাঁদা তুলতে মত্ত। এ এক আলাদা আনন্দ। এমনও হয় উঁচু বাঁশ তুলতে গিয়ে কোনো পথচারীর ঘাড়ে পড়লো; ভয়ে দে ছুট। তবুও আনন্দ। আবার ফিরে আসা। চাঁদা তোলা।
শিশুরা রাস্তার এক পাশে কাপড়ের অস্থায়ী মন্দির বানিয়ে সেখানে ঠাকুর বসায়। বিশেষ করে লক্ষী-নারায়ণ কিংবা রাধা-কৃষ্ণের ছবিই বেশি দেখা যায়। এক একটি দলে অন্তত চার পাঁচ জন ছেলেমেয়ে থাকে। আবার কোনোটিতে আরও বেশি কিংবা কম। কোথাও এমনও দেখা যায় প্রায় তিনশো মিটার কিংবা পাঁচশো মিটার দূরে দূরে এই মন্দির এবং তাঁদের ব্যারিকেড। তবে এই দলের গড় বয়স মোটামুটি নয় দশ।
অনেকেই আবার বিরক্তও হন। বিরক্ত হলেও শিশুদের অনেক আবদারে কেউ, কেউ’বা পাঁচ বা দশটাকা দিয়ে থাকেন। অনেকে’ই আবার এই বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে পকেটে খেঁজুর কিংবা লটকা নিয়ে রাখেন, এই দিয়েই শেষ টানতে চান। তবে যাইহোক না কেন, শিশুদের সঙ্গে বড়োরাও কিন্তু চুপিসারে মজা পায়।
দু’দিনের এই আদায়ীকৃত চাঁদা/ অর্থ দিয়ে পূজার বিভিন্ন উপকরণ কেনে শিশুরা। আবার এর মাঝে শিশুরা নিজেদের’ই আধা বুলি সুরে কীর্তন গেয়ে চাঁদা তোলে। এই সমস্ত কিছু অর্থ/ চাঁদা এরপরে নিজেরা ঠাকুরের কাজে লাগায়।
যাদের অতীতের সঙ্গে এইসব কাহিনী জড়িয়ে আছে তারা সত্যি’ই বুঝবে এও যে কতটা আনন্দ! অনন্য উদযাপন। মাটির সাথে লেপ্টে থাকা এ এক অনন্য উৎসব। আলাদা ঘ্রাণ।