উজির আলি,মালদা: রেশন নিয়ে বিতর্ক থামার নাম নেই। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের মোহনপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রেশন নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক এবং শেষ পর্যন্ত তা পৌঁছে যায় হাতাহাতিতে। প্রথমত পঁচা আলু তার উপর ওজনেও জালিয়াতি করে কম পরিমাণে আলু দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে উপভোক্তারা। এই বিষয়কে ঘিরে শুরু হয় বাকবিতন্ডা এবং তা পৌঁছায় মারধর পাল্টা মারধরে। শাসক দলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের গায়ে হাতও তোলে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। এর জেরে উত্তপ্ত হরিশচন্দ্রপুরের মোহনপুর এলাকা। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভের জেরে তেতে উঠল মালদহের ওই এলাকা।শনিবার বিকেলে এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এইদিন হরিশচন্দ্রপুর ২ ব্লক মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মোহনপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়িতে রেশন বিতরণের সময় উপভোক্তারা এসে অভিযোগ করে যে আলু ওজনে কম আছে। তা নিয়ে উপভোক্তা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। উপভোক্তাদের কাছে নালিশ শুনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে কেন পরিমাণে কম ও পঁচা আলু দেওয়া হচ্ছে তা জানতে চেয়েছিলেন শাসক দলের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। তখন মহিলা প্রধানকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী মারধর করেন বলে অভিযোগ। এরপরই তেতে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দারা। বচসা তীব্র আকার ধারণ করে। ঐ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এরপর মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চেলে গেলে উপভোক্তারা আলু রাস্তায় ফেলে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।

আইসিডিএস দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কেন্দ্রে শিশু ও মহিলা মিলিয়ে শতাধিক উপভোক্তা রয়েছেন। স্কুলে মিড ডে মিলের মতোই রান্না করা খাবারের বদলে তাদের সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এ মাসে উপভোক্তাদের একসঙ্গে তিন মাসের জন্য উপভোক্তা পিছু ৬ কিলোগ্রাম করে আলু দেওয়ার কথা। তা জেনেই এদিন মোহনপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে উপভোক্তা শিশু ও মহিলারা হাজির হয়। ইলেকট্রনিক মেশিনে আলু মেপে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু পরে বাড়ি থেকে ফিরে এসে উপভোক্তারা বলেন যে তাদের ওজনে কম আলু ও পঁচা আলু দেওয়া হয়েছে।
উপভোক্তা বিক্ষোভকারী আনোয়ারা খাতুন বলেন, আমাদের তিনজনের জন্য ১৮ কিলোগ্রাম আলু পাওয়ার কথা। কিন্তু দেওয়া হয় ১১ কিলোগ্রাম। মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান নীলুফার ইয়াসমিনের বাড়ি মোহনপুরেই। ওদের বলেও ফল না হওয়ায় পাশেই প্রধানকে গিয়ে সব বলি।

মশালদহের প্রধান নীলুফার বলেন, উপভোক্তারা বাড়িতে এসে বলায় কেন্দ্রে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাই। কথাবার্তার সময় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহ তার স্বামী আমার গলা চেপে ধরে এবং শ্বাসরোধ করে প্রাণে মারার চেষ্টা করে। গলায় এখনও নখের চিহ্ন রয়েছে বলে প্রধান দাবি করেছে। ঘটনার বিবরণ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে প্রধানের তরফে। যদিও অভিযুক্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সানোয়ারা বিবি সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের বিডিও পার্থ দাস বলেন, “কি হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি। পরিমাণে কম ও খারাপ আলু দেওয়া হলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মালদা জেলা পরিষদের শিশু-নারী ও ত্রান দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মর্জিনা খাতুন। তাঁর কথায়, প্রধান একজন জনপ্রতিনিধি।এলাকার খোঁজ রাখা তারও দায়িত্বে পরে। তবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর অবভ্য আচরণ কাম্য নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, লকডাউনে খাদ্য সঙ্কটে শিশুদের পুষ্টিতে যেন কোনও খামতি না থাকে। তাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলিতে রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হচ্ছে চাল, ডাল, আলু থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। তবে তা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কাছে আনতে গিয়ে যে বঞ্চনার শিকার হতে হবে, অনুমানও করতে পারেননি মোহনপুর গ্রামের মায়েরা। তবে মিলবে কি পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার?সেই অপেক্ষায় এখন গোটা মোহনপুর বাসী।