গত এক বছর ধরে সমগ্র বিশ্ব করোনা মহামারীর প্রকোপে গৃহবন্দি হয়ে গিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছে এই মারণ ভাইরাসের জন্য। তাহলে এই বছর এইভাবে ভোটের প্রচার কি দরকার ছিল?দায়ী কে বা কারা?আমি বলব আমরা জনগণরাই দায়ী।যে ভাইরাসের প্রকোপ একদম কমে গিয়েছিল আমরা আশার আলো দেখছিলাম নতুন দিনের , সেই ভাইরাসের প্রকোপ প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেল কেন?
এই ভোটের প্রচারে কোন রকম করোনা বিধি মানা হয় নি।কিন্তু জনগণ কেউ তার প্রতিবাদ করেনি।পার্টির লোকেরা কি করতে পারত যদি জনগণ একত্রিত হয়ে এই প্রচারের বিরোধিতা করত?আমার চোখে এই মুহুর্তে সব দলই সমান।তারা কেউ দেশের লোকেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবে নি আর ভবিষ্যতে ও ভাববে না।যদি সত্যি কোন দল ভাবত তা হলে এই পরিস্থিতিতে এইভাবে লাগাম ছাড়া অবস্থায় প্রচারে নেমে দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি করতো না।
যদি দেশে মানুষই না সুস্থভাবে বেঁচে থাকে তাহলে কাকে নিয়ে এরা রাজত্ব করবে?যতদিন না মানুষ একত্রিত হবে ততদিন লঙ্কায় যে আসবে সেই হবে রাবণ।সমগ্র বিশ্ব আমাদের পশ্চিমবাংলার ভোটের প্রচার নিউস চ্যানেলে দেখে ছিঃ ছিঃ ছিঃ করছে।আজই তার প্রমাণ পেলাম। আজ মাদার টেরিজার হাউসে গিয়েছিলাম। এখন যিনি মিশনারি অফ চ্যারিটি র প্রধানা তিনি জার্মান দেশের মানুষ। আমার হৃদয়ের খুব কাছের মানুষ। আজ পরিষ্কার বললেন সত্যি কি হচ্ছে ভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে!!একজন ভারতীয় হয়ে শুনতে খুবই লজ্জা লাগে। আর সত্যি নিজেই তো বাড়িতে মেয়ের সঙ্গে আজকাল নিউস চ্যানেলগুলোকে বিনোদন এপিসোড মনে করে সময় কাটাই।
এইসব তবু মেনে নেওয়া যেত যদি দেখতাম করোনা সম্বন্ধে এরা সচেতন। আরো একটা ঘটনা ঘটল ।একটি ছেলে মুখে মাস্ক পড়েনি বলে তাকে মাস্ক পড়তে বলি একজন ভদ্রলোক ও সমর্থন করেন।ছেলেটি পকেটে মাস্ক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু তবু পড়ল না অথচ আমি একটু এগিয়ে যেতে ভদ্রলোককে হুমকি দিয়ে বলে পালাল সে নাকি কুপিয়ে রাখবে। এই হল আমাদের রাজ্যের ছবি।এই রাজ্যে আবার ভোটাভুটি আর প্রচার!!নেতা থেকে জনগণ সবাই সমান।সবাই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু ভোটের পর কত লোক সুস্থভাবে জীবিত থাকবে সেটা কেউ ভাবছে না!!সত্যিই খুব দুঃখের। ঈশ্বর শিক্ষা দিচ্ছেন,শাস্তি দিচ্ছেন কিন্তু মানুষকে পাল্টাতে পারছেন না।সত্যি আজ আর গর্ববোধ করতে পারি না নিজেকে ভারতীয় বলে দেশের লোকেদের হঠকারিতা দেখে আর দূরদৃষ্টির অভাব দেখে।একসময় এই দেশের স্বাধীনতার জন্য কতটাই সংগ্রাম না করে গেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা।আমার প্রপিতামহ উমেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি ছিলেন। কতজন এখন আর মনে রাখছে।বাঙালি সত্যিই চিরকাল কারোর না কারোর দাসত্ব করে গেল।সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এ দেশ!!সমস্ত স্কুল বন্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য। দশম শ্রেণী ,দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা স্থগিত। হসপিটাল এ করোনার বেড সব ভর্তি। কিন্তু মাস্ক ছাড়া ভোটের প্রচার চলছে , চলবে, কুম্ভমেলায় ভিড় উপছে পড়ছে কোন বিধি নিষেধ মেনে কুম্ভমেলা সম্ভব নয় সেটা ও নিউজে দেখছি। আবার এও দেখছি কুম্ভমেলায় স্নান করলে করোনার ভয় নেই। 😂😂হে ভগবান ঘোর কলি…..এর থেকে মুক্তির উপায় তুমি একমাত্র জানো। আর নিতে পারছি না এইসব অন্যায় আর অনাচার😡
আগের বছর আশা করেছিলাম ১৪২৮ মহামারী মুক্ত নববর্ষ পাব।কিন্তু তা হয়নি। তাই এই ১৪২৮ এর প্রথম দিনে আমাদের আরো সর্তক হওয়া উচিত, ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আমাদের পৃথিবীকে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলুন।নতুন বছর সবার আনন্দে ভরে উঠুক। অন্যকে দোষ না দিয়ে নিজেদের দোষ দেখার সময় এসেছে। জানি না কি আছে আমাদের ভবিষ্যতে কিন্তু আমরা সমগ্র দেশবাসী একত্রিত হয়ে এই অন্যায় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মদের জন্য নতুন কিছু করে বিশ্বের দরবারে নির্দশন রাখতেই পারতাম। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে বাস করলেও আমরা আমাদের দেশের নেতাদের হাতের পুতুল। আর তাদের জন্যই আমরা আজ সমগ্র বিশ্বের কাছে হাস্যাস্পদ হয়ে উঠেছি।
কলমে জয়ন্তী বন্দোপাধ্যায় মুখার্জি