তাহমিদুল ইসলাম
২০০৭ সালে স্টিভ জবস যখন প্রথম আইফোন রিভিল করে, তখন প্রথমবারের মত তারা কোনো ফোন থেকে কীবোর্ড পুরোপুরি তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়। যার ফলে অ্যাপল ফোন ইন্ডাস্ট্রিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। যার ফলে তারা অন্যদের চেয়ে ৫ বছর এগিয়ে যায়।
ফোনের স্ক্রীনে গরিলা গ্লাস, ফোনে ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট যুক্ত করা, ফোন থেকে মেইল করা।
অ্যাপল অন্যদের থেকে কেবল এগোতে থাকে।অ্যাপলের এরকম নানা ইনোভেশন ফোন ইন্ডাস্ট্রিকে তার সময়ের চেয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়।
স্টিভ জবস মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে চলে। কিন্তু জবস মারা যাওয়ার পর অ্যাপল তার ইনোভেশন হারিয়ে ফেলে, খুব স্বাভাবিকভাবেই।
এরপর অ্যান্ড্রয়েড অনেক দূর এগিয়ে গেলেও, আইফোন সবসময় পেছনে পড়ে থেকেছে।
অ্যাপল যখন আইফোন ৭ এর ঘোষণা দেয়, তখন তারা প্রথমবারের মত ফোন থেকে হেডফোন জ্যাক তুলে নেয়। এটাকে তারা বলে নতুনত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে।
তার আধা ঘণ্টা পর তারা তাদের নতুন পণ্য অ্যাপল এয়ারপড উন্মোচন করে।
এয়ারপড হচ্ছে তাদের ওয়্যারলেস বা তারবিহীন ইয়ারফোন। ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে কাজ করায় যেটা ব্যবহার করতে হেডফোন জ্যাকের প্রয়োজন হবেনা।
অ্যাপল ঘোষণা করে হেডফোন জ্যাক সমস্যার সমাধান তারা নিয়ে এসেছে এয়ারপডের মাধ্যমে। যেহেতু এটা ব্লুটুথ দিয়েই কানেক্ট হবে, তাই এরজন্য কোনো হেডফোন জ্যাক লাগবেনা।
জানালো, অ্যাপল সবসময় সব সমস্যার সমাধান আনে। অবশ্য এই সমস্যাও তাদের নিজেদের সৃষ্টি করা।

সমস্যা তৈরী করে সেটার সমধান বিক্রি করাটা পুঁজিবাদের একটা দারুণ লাভজনক আইডিয়া।
হেডফোন জ্যাক না থাকায় মানুষ হয় ডঙ্গল অথবা এয়ারপড কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
আর অ্যাপল তাদের এয়ারপড বিক্রি করে লাভ করেছে ৮ বিলিয়ন ডলার।
প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা তারা লাভ করেছে শুধুমাত্র ব্লুটুথ এয়ারফোন বিক্রি করে। যেটা তারা মানুষকে কিনতে বাধ্য করেছে।
মোবাইল ফোন কোম্পানী গুলো দেখলো, বাহ! এ তো দারুণ লাভজনক আইডিয়া!
তারাও তাদের ফোন থেকে হেডফোন জ্যাক তুলে নিল, আর ওয়ারলেস ইয়ারফোন বিক্রি করা শুরু করলো।
হুয়াওয়ে হেডফোন জ্যাক তুলে নিল, আনলো হুয়াওয়ে ফ্রী বাডস। স্যামসাং হেডফোন জ্যাক তুলে নিল, আনলো তাদের গ্যালাক্সি বাডস। ওয়ানপ্লাস হেডফোন জ্যাক তুলে নিল, আনলো তাদের বুলেট হেডফোন। এভাবে কোম্পানী গুলো অ্যাপলের অনুকরণে তাদের গ্রাহকদের ওয়ারলেস ইয়ারফোন আর হেডফোন কিনতে বাধ্য করছে।
অ্যাপলে ক্লাউড স্টোরেজ থেকে শুরু করে মিউজিক প্লে সব কিছুর জন্য খরচ করতে হয় টাকা। গুগল অ্যাপলের পথ ধরে তাদের আনলিমিটেড ফ্রী স্টোরেজ বন্ধ করে দেয়, বন্ধ করে দিয়ে তাদের ফ্রী গুগল প্লে মিউজিকও। বদলে নিয়ে এসেছে সাবস্ক্রিপশন ফী সমৃদ্ধ ইউটিউব মিউজিক।
অ্যাপল এইবার তাদের আইফোনের সাথে চার্জার তুলে নিয়েছে। এমনকি আগের মডেল গুলোর সাথেও তারা আর চার্জার দিচ্ছেনা।
আমার ধারণা চার্জার তুলে নিয়ে শুধু আলাদাভাবে চার্জার তুলে নেয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। তাদের উদ্দেশ্য অন্য জায়গায়।
অ্যাপল হয়তো তাদের ফোন থেকে ভবিষ্যতে চার্জিং পোর্টও তুলে নেবে। তারপর তারা ওয়্যারলেস চার্জার বিক্রী করবে। মানুষকে বাধ্য করবে ওয়্যারলেস চার্জার ব্যবহার করতে। এমনকি তারা এখনই যদি চার্জিং পোর্ট তুলে নাও নেয়, ওয়্যারলেস চার্জার বিক্রী করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। অ্যাপল সবসময় এন্টি কনজিউমার একটা কোম্পানী। এখন সমস্যা হচ্ছে, অ্যাপলের এমন স্ট্র্যাটেজীতে অন্য কোম্পানীরা যখন বিলিয়ন ডলারের লাভ দেখতে পায়, তখন তারাও সেদিকে ছুটে।
সামনে হয়তো অন্যান্য কোম্পানী গুলোও ফোনের সাথে চার্জার তুলে নেবে, আর গ্রাহকদের বাধ্য করবে ওয়্যারলেস চার্জার ব্যবহার করতে। ওয়্যারলেস চার্জার, ওয়্যারলেস হেডফোন খারাপ কিছু না, কিন্তু সেটা ব্যবহারের জন্য বাধ্য করাটা অবশ্যই খুবই খারাপ ব্যাপার। অ্যাপল নিজেদের ইউজারবেসের সাথে সাথে অন্যান্যদেরও ক্ষতি করে এভাবে। ভবিষ্যতে আমরা ফোনের সাথে চার্জার বিহীন দিনের দিকে এগোচ্ছি।