রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের বৃদ্ধিজনিত কারণে সৃষ্টি হয় আর্থ্রাইটিস
মনোজ মাইতি (শারীর বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক, বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয়)
আর্থ-সামাজিক অবস্থা মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে অত্যন্ত সম্পর্কযুক্ত। আর্থ-সামাজিক সচলতা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতার অভাবে শারীরিক ও শারীর বৃত্তীয় ক্ষতি হয়ে থাকে অনেক সময়। খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন, বিপাকক্রিয়ার ত্রুটি ও কিডনির সমস্যা থেকে মানব দেহের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের বৃদ্ধি এবং এর প্রভাবে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, যন্ত্রণা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায় যা আমাদের কাছে গেঁটেবাত বা গাউট বা আর্থ্রাইটিস রোগ হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে চিকিৎসকদের মতে শতকরা প্রায় কুড়ি জন ব্যক্তির রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ স্বাভাবিক অপেক্ষায় বেশি কিন্তু এর মধ্যে মাত্র শতকরা ৫ জন রোগী চিকিৎসকের পরামর্শে থাকেন, বাকিদের কিডনি রোগ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যা থেকে মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়।
প্রতিটি সজীব কোষে প্রতিনিয়ত বিপাক প্রক্রিয়া চলছে। কিছু প্রক্রিয়া দেহে নতুন পদার্থ উৎপাদনে, অপরপক্ষে কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহ কোষের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ ভেঙে যাচ্ছে যা শক্তি উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে। প্রোটিনযুক্ত ও ইউরিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্যবস্তু অধিক গ্রহণ, অত্যাধিক পরিমাণে নিয়মিত মাংস, পেঁয়াজ, বিনস, কড়াইশুঁটি, মাশরুম, অত্যাধিক মদ্যপান ইত্যাদির মাধ্যমে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
মার্কিন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি জীবনকাল কমিয়ে দেয়। কিডনি বা বৃক্কের প্রধান কাজ মূত্র উৎপন্ন করা। আমাদের দেহের দূষিত পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়। কিডনি বা বৃক্কের সমস্যার ফলে রক্তে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন ইউরিক অ্যাসিড লবণ বা কৃষ্টাল বা মনোসোডিয়াম ইউরেট নানা জায়গায় বিশেষত অস্থিসন্ধি, গোড়ালি, হাটু, হাড়ের সংযোগে জমা হয়। ফলে এই জায়গাগুলি ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, ব্যথা ও তীব্র যন্ত্রণা হয়, যন্ত্রনা ক্রমশ পার্শ্ববর্তী স্থানে বিস্তারিত হতে থাকে। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নির্ণয়, এক্সরে, ইউএসজি, সিটি, এমআরআই ইত্যাদির মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য বস্তু, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, বাদাম ইত্যাদি না খাওয়া বা খাদ্য তালিকা থেকে খাদ্যগুলো এড়িয়ে যাওয়া, কারণ এগুলি রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে। অ্যালকোহল সেবন বর্জন করতে হবে। গাউট রোগ প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ঔষধ যেমন- এলপিউরিনল, ফিভাক্সপোস্টেড ইত্যাদি।
মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, স্বাস্থ্য সচেতনতা, স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ও ধারণা থাকলে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ বা প্রতিকার সম্ভব। যেমন দেহের ওজন বৃদ্ধি বা মেদ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার পাশাপাশি, থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার বা আক্রান্ত সন্তান জন্ম দেওয়া প্রতিরোধ সম্ভব। অন্যদিকে প্রোটিন যুক্ত খাদ্য কম খাওয়ার মাধ্যমে বা ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রাখার মাধ্যমে আর্থাইটিস বা বাতের রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।