
ফিরোজ হক্, মেটেলি: লকডাউনের দরুণ বিপন্ন হয়েছে বহু সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। দেশের কিছু কিছু এলাকায় এতটাই দুর্দশা দেখা দিয়েছে যে বহু মানুষকে অনাহারে দিন কাঁটাতে হচ্ছে। পেটের দায়ে অনেকে গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে কচু শাক। এমনই একটি দুর্দশাপূর্ণ এলাকা হল মেটেলী ব্লকের নাগেশ্বরী চা বাগানের অন্তর্গত ২২ নম্বর এলাকা।
এই স্থানের মানুষেরা সাধারণত দিনমজুর ও চা শ্রমিকের কাজ করেই জীবনযাপন করে। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে লকডাউন তাদের জীবনে ডেকে এনেছে হতাশা। লকডাউনের দরুণ একদিকে যেমন বাসিন্দাদের দিনমজুরের কাজ বন্ধ, অন্যদিকে তেমনি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে নাগেশ্বরী চা বাগান।
এমতাবস্থায় এই এলাকার মানুষকে পেটের দায়ে শাকপাতা খেয়েই দিনযাপন করতে হচ্ছিল। এমনকি শিশুরা সামান্য দুধ পর্যন্ত মুখে দিতে পারছে না। ২২ নম্বর এলাকার এই দুর্দশাপূর্ণ ছবি জানতে পেরে তাদের পাশে মানবিক হাত বাড়িয়ে দিল হেল্পিং হ্যান্ডস।
মেটেলী বাজার থেকে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথ জেনেও পিছিয়ে পড়েনি হেল্পিং হ্যান্ডসের সদস্যরা। হেল্পিং হ্যান্ডসের সদস্য মানিক রায় টোটোচালক। তিনি নিজের পেটের চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে টোটো নিয়ে পাড়ি দেয় ২২ নম্বরে। তবে টোটোতে খাদ্যসামগ্রীর স্থান হলেও রবীন্দ্রনাথের সোনারতরীর মতোই স্থান হয়নি অন্যান্য সদস্যদের। তাই অন্যান্য সদস্যরা পায়ে হেঁটেই যাত্রাভিমুখে ছুট দেয়। শুধু তাই নয় রাস্তাঘাটের দশা বেহাল হওয়ায় হাতে ও কাঁধে করেও দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে চলতে হয় হেল্পিং হ্যান্ডসের সদস্যদের।
এক সদস্য রেজাউল ইসলাম রোযা (মুসলমানদের রমযান মাসের নির্জলা উপবাস) নিয়েও মাথার উপর সূর্যের প্রখর দাপদাহকে সঙ্গ করে এই দীর্ঘ পথ যাত্রা করেন।
এই দীর্ঘ পথ যাত্রা করে হেল্পিং হ্যান্ডস কমিটি এই এলাকার ৩৫টি পরিবারের হাতে চাল, ডাল, সোয়াবিন সহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয়। সেইসঙ্গে শিশুদের কথা চিন্তাভাবনা করে কিছু শিশু খাদ্যও বিতরণ করে তারা।
শুধু খাদ্যসামগ্রীতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তাঁরা। এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করার জন্য ফেস মাস্কও প্রদান করা হয় কমিটির তরফ থেকে।