নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি: দেশজুড়ে করোনা অতিমারির দরুণ দুরাবস্থা উঠে এসেছে দেশের একাধিক স্থান থেকে। এই পরিস্থিতিতে অসহায় নিরন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সহৃদয় মানুষেরা। তবে, ত্রাণের লাইনে সম্মানের দরুণ হাত পাততে পারেননা মধ্যবিত্ত মানুষেরা।
করোনা অতিমারি জনিত কারণে পশ্চিমবঙ্গের যে বিপন্ন অবস্থা সেখানে সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন একাধিক আংশিক সময়ের শিক্ষক, গৃহশিক্ষক ও বেশ কিছু বেসরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করে লকডাউন পরিস্থিতিতে তারা এতটাই সমস্যায় পড়েছেন যে, তাদের কাছে শিক্ষকতা করা ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় নেই। বিদ্যালয়গুলি বন্ধ। বেতন পাচ্ছেন না। বিদ্যালয় চালু হওয়ার পরও বকেয়া বেতন পাবেন কি না সে বিষয়েও কোনোকিছু নিশ্চিত করেনি স্কুল কতৃপক্ষ। এমতাবস্থায় অভিভাবকরা প্রাইভেট টিউশনিও পড়াতে চাচ্ছেন না। তাই দু-বেলা ডালভাত খাওয়ার মতো অবস্থাতেও তারা নেই।
আর শিক্ষকতা পেশা বাদ নিয়ে অন্য কোনো পেশার সঙ্গে যুক্তও হতে পারছেন না তারা। কলেজের শিক্ষকরা কলেজের কমিটি মারফত নির্বাচিত হলেও তারা স্থায়ীত্বকরণ পেয়েছে। তবে, স্কুল শিক্ষকরা কেন সে অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তারা।
এই শিক্ষকেরা তাদের সমস্যার জন্য বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রী, ডি.এম কে জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ আংশিক সময়ের বিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের তরফে বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের সমস্যা জানাতে ও স্থায়ীত্বকরণের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। এমনকি, একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছেন। তবে সরকারি কোনো আধিকারিকই আংশিক সময়ের শিক্ষকদের আবেদন বা দাবির কোনো সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
ইতিমধ্যেই এই কমিটির তরফে বিশাল মিশিল করে বিকাশভবনে ডেপুটেশনে দেওয়া হয়েছে। এই শিক্ষকরা স্কুল কমিটির দ্বারা নির্বাচিত হন। তবে, স্থায়ী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করলেও বেতন পান ১৫০০-৩০০০ এর মধ্যে। এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ জানিয়েছেন, এতো খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও তারা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন।
মেটেলী উচ্চবিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষক চানু হোসেন জানিয়েছেন, “আমি মাত্র ২৫০০ টাকা বেতন পাই। এই অর্থে সংসার চলে না। তাই গৃহশিক্ষকতা করে কোনোভাবে সংসার নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু লকডাউন সেইটুকুও কেড়ে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কিছু সাহায্য পাওয়া গেলে উপকৃত হতাম।”
জলপাইগুড়ি জেলার আংশিক সময়ের শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি তাপস রায় জানিয়েছেন, “গত সাতবছর থেকে শিক্ষকতা করছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বেতন ৩০০০-এর বেশি হয়নি। কাজের কোনো স্থায়ীত্ব নেই। এই নিয়ে ভয় চেপেই থাকে। সরকারি তরফে আমাদের স্থায়ীত্বকরণ করে নূনতম ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার মতো বেতনের আর্জি জানাচ্ছি।”