
আব্দুল ওয়াকিল, মালদা
কৃষি প্রধান দেশ আমাদের ভারতবর্ষে মৃত্তিকা ও আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে ভিন্ন ভিন্ন চাষাবাদ লক্ষ্য করা যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। দেশে ছয়শোর অধিক জেলার মধ্যে মালদা জেলার নাম সকলের জানা ফলের রাজা ফজলি আম চাষের জন্য। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় তিন হাজার বছর আগে থেকে আম বাগানের কথা জানা যায়। মালদার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী আম চাষের উপযোগী। বর্তমানে গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতে আম চায়ের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। সুস্বাদু এই ফলের বিশ্বের চাহিদার অর্ধেক পূরন হয় ভারত থেকে যার সিংহভাগ উৎপাদন হয় মালদা জেলা থেকে। জেলার প্রায় তেত্রিশ হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে আমবাগান। তিনশো বছরেরও পুরনো আমবাগান যেমন রয়েছে তেমনি নতুন নতুন আম বাগান তৈরি হচ্ছে প্রতিবছর। জেলার সত্তর ভাগ মানুষ আম চাষের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। গত বছর প্রায় তিন লক্ষ সত্তর হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন করতে পেরেছিল আম চাষিরা। মালদার আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে প্রতিবছর।
এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে মালদার আম বাগান গুলো মুকুলে ভরে উঠে, চাষীরা উচ্চ ফলনের আশায় গাছ পরিচর্যা শুরু করেন। মার্চে প্রথম সপ্তাহে কালবৈশাখী দেখা দিলে শঙ্কিত হন কৃষকরা কিন্তু বৃষ্টি জলে মুকুলে ছত্রাক ধারন করলে নষ্ট হয়ে যায় ফুল। বৃষ্টির পরে পরেই শুরু হয় ছত্রাকনাশক স্প্রে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি দিন কয়েক পরেই আবার কালবৈশাখী চাষীদের পরিশ্রমকে জলে ভাসিয়ে দেয়। সিংহভাগ মুকুল নস্ট হয়ে যায়। আমের পরিমাণ কম থাকায় যথাযথ পরিচর্যা করতে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষীরা। ফলে আমের গুনগতমান মান কমে যাওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।
মরশুমের শুরুতে বিরূপ আবহাওয়া ও করোনার বিপদ এই দুইয়ের কোপে পড়ে মালদায় প্রায় ছয়শো কোটি টাকার আম ব্যাবসা অনিশ্চয়তার মুখে। আমকে কেন্দ্র করে আমসত্ত্ব, জ্যাম, জেলি, জুস , আচার, চাটনি প্রভৃতি ক্ষুদ্র শিল্পেও বিরুপ প্রভাব পড়বে। স্বল্প মূল্যে চাষীদের কাঁচা আম বিক্রি করতে হয়, এবং তুলনামূলক অধিক দামে বিক্রি হয় রাজ্যের বাইরের জুস, আচার প্রভৃতি উৎপাদন কেন্দ্রে। আম চাষীদের দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও আমকে কেন্দ্র করে মালদায় কোন বৃহৎ শিল্প গড়ে ওঠেনি। ফলে লক ডাউনের মধ্যে আম বিক্রিকে ঘিরেও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
নব্বই হাজার চাষী সহ সারে চার লক্ষ শ্রমিকের রুজি রোজগার প্রশ্নের মুখে। গত বছর ফারাক্কা ব্রীজের সংস্করনের জেরে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার ফলে জেলার বাইরে আম রফতানিত ব্যাহত হয়, লসের মুখে পড়তে হয় চাষীদের। পর পর দুই বছর লসের আশঙ্কাই আম গাছ কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন আম চাষীদের একাংশ। এদিকে লক ডাউনের জেরে বেকারত্বের হার বাড়ছে। এমত অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পেলে মালদা জেলা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়বে বন্যা কিংবা অতিবৃষ্টির ফলে ফসল নস্ট হলে রাজ্য সরকার আর্থিক সহায়তা দেয় তেমনি কালবৈশাখীর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত আম চাষীদের আর্থিক সহায়তা সময়ের দাবি।