পর্যটনের অন্যতম একটি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জাটিঙ্গা সুপরিচিত। জাটিঙ্গা শব্দের অর্থ ‘বৃষ্টি ও জল বেরিয়ে যাবার পথ’! আসামে শিলং পাহাড়ের পর শুরু হয় হাফলং পাহাড়ের সারি। আসামের উত্তর কাছাড় জেলার সদর শহর হাফলং থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে জাটিঙ্গা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ছোট্ট একটি গ্রাম। যে কারণে জাটিঙ্গায় পর্যটকরা ভিড় করে তা খুবই মর্মান্তিক। কী সেই কারণ? পাখিদের আত্মহত্যা দেখতে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে জাটিঙ্গায়।
শোনা যায়, শতাধিক বছর আগে নাগা উপজাতির কিছু লোক জাটিঙ্গায় গিয়েছিলো। সেখানে আগুন পোহানোর সময় তারা এক আশ্চর্য দৃশ্য দেখতে পায়। দলে দলে পাখিরা এসে আগুনে আত্মসমর্পণ করছে নিজেকে। হ্যাঁ, স্বেচ্ছামৃত্যু! কিন্তু কেন? পাখিদের এই আত্মাহুতিকে স্থানীয়রা ঈশ্বরের দান বলে মনে করে! প্রতি বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে এখানে বিভিন্ন ধরনের পাখি এসে দলে দলে আত্মহত্যা করে! এই রহস্যময় ঘটনাই জাটিঙ্গাকে অনবদ্য করে তুলেছে ট্যুরিজমের খাতায়! আসাম পর্যটন দপ্তর একটি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করেছে জাটিঙ্গায়, যেখানে উঠে রাতের বেলা পাখিদের আত্মহত্যা দেখা যায়!
স্থানীয় মানুষদের মাংসের প্রয়োজন হলে রাতে আগুন জ্বেলে বসে। পাখিরা ডানা ঝাপটে আসতে থাকে আত্মাহুতি দিতে। আলোর উৎসের ঠিক উপরে এসে পাখা আর পা ছেড়ে দিয়ে ধপ করে মাটিতে পড়ে যায়। যেন জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক…’। মায়াবি চোখের এই পাখিগুলোকে তখন দেখে মনে হয় অর্ধমৃত। জীবনের প্রতি ভীষণ বিরক্ত। আর তাই এ জীবন তারা রাখতে চায় না।
আকাশ থেকে লুটিয়ে পড়ার সময় সব পাখিই যে আগুনের উপর ঝাঁপ দেয়– তা কিন্তু নয়। বরং কিছু পাখি ইতস্তত ছড়িয়ে থাকে আগুনের পাশে। কিন্তু ওরা বেঁচে থাকলেও মরার মতোই পড়ে থাকে এবং সহজেই ধরা দেয়। পাখি শিকারের জন্য এর চেয়ে সহজ উপায় আর কী হতে পারে? অনেক সময় আগুনের দিকে উড়ে আসতে থাকা পাখিদের গুলতি দিয়েও সহজেই শিকার করে গ্রামবাসীরা। পরিশেষে বলাই যায় এই গ্রাম চিরকালই রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়ে যাবে বরাবর..