
দ্য থার্ড আই ডেস্ক : করোনা সংক্রমণের ফলে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় আমাদের সামনে একাধিক মানবিক ছবি উঠে এসেছে। নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও মানবিক হয়ে অসহায় পরিবারগুলিকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। আবার এক লকডাউনের সময়ই সাম্প্রদায়িক খেলাতেও মেতে উঠেছিলেন অনেকে। তবে শুধু সাম্প্রদায়িক খেলা নয়, সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে মানুষ সেই ধরনের চিত্রও উঠে এসেছে আমাদের সামনে। এককথায় লকডাউনের সময় আমরা এক অখন্ড ভারতবর্ষকে চিনে নিতে পেরেছি।
তবে, ধর্মের কাছে মানুষকে বড়ো করে দেখা হয়েছে এই ধরনের ছবি হয়তো আমাদের সামনে ফুটে ওঠেনি। ফুটে উঠলেও তা সীমিত সংখ্যার মধ্যে। এবার এই ধরনের একটি প্রকৃত ধার্মিক ও মানবতার চিত্র উঠে আসলো ম্যাঙ্গালুরু থেকে।
ম্যাঙ্গালুরুর ৫৫ বর্ষীয় কৃষি শ্রমিক আব্দুর রহমান সারাজীবন ধরে হজে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। কিন্তু হজে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ ছিল না তার কাছে। তাই তিনি কিছু বছর থেকে অর্থ সাশ্রয় করছিলেন হজে যাওয়ার জন্য। বেশ কিছু টাকা সাশ্রয়ও হয়েছিল।
কিন্তু সরকারি তরফে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় তিনি মানুষের দুর্দশা দেখে থাকতে পারেননি। তার মনে হয়েছে এই মুহূর্তে মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যের জন্য হাহাকার। এই পরিস্থিতিতে টাকা সঞ্চয় করে রেখে দিলে খোদা তাকে ক্ষমা করবেননা। তাই হজে যাওয়ার জন্য জমানো টাকা দিয়েই মানুষকে ত্রাণ বিলি করেছেন তিনি।
আব্দুর রহমানের ছেলে ইলিয়াস বলেছেন, “যে কোনও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মতো আমার বাবাও হজে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি একজন শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন এবং আমার মা বাড়িতে বিড়ি গড়েন। তিনি বহু বছর ধরে ইসলামের পবিত্র স্থানগুলি দেখার জন্য অর্থ সাশ্রয় করছিলেন। কিন্তু তিনি অনুভব করেছিলেন যে সংরক্ষণ করা টাকাটি এমন সময়ে ধরে রাখলে ক্ষুধার্ত লোকেরা তার জন্য অভিশাপ বয়ে আনবে। তাই তিনি নিজের সঞ্চয় দিয়ে লোকদের খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
আব্দুর রহমানের ছেলে ইলিয়াসের দেওয়া ভাষ্য থেকেই তাদের পরিবারিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। তা সত্ত্বেও এই মানুষটি গুডিনাবালি গ্রামের ২৫ টি পরিবারে তার সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দিলেন।
তিনি জানিয়েছেন, “লকডাউনের কারণে জীবন কাটাতে না পেরে দরিদ্রদের দুর্দশা দেখে আমি দুঃখ পেয়েছিলাম। তাই আমি তাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তবে তীর্থযাত্রার জন্য ঠিক কতটা টাকা সঞ্চয় করেছেন তা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে চেয়েছেন তিনি। অনেকে বলেছেন, প্রায় ৩ লক্ষ টাকা তিনি ব্যয় করেছেন।
তবে তিনি যত টাকাই ব্যয় করে থাকেন না কেনো তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে সবার উর্দ্ধে মানুষ। এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাসিন্দাদের একাংশ যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টায় উঠে পড়ে লেগেছে, সেই সময়ে আব্দুর রহমানের এই কাজ মানবিকতার উজ্জ্বল চিত্র হিসাবে মানুষের মনে থেকে যাবে।