
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত কনফারেন্সে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমরা যেটা চেয়েছিলাম তা দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কে ধন্যবাদ জানাই”।
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ তান্ডবে গোটা বিশ্বের পাশাপাশি অত্যন্ত বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে মার্কিন মুলুক। বিভিন্ন দেশের প্রথম শ্রেণীর গবেষকগণ এই মারণব্যাধির ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ এতে পরিপূর্ণভাবে সফল হতে পারেননি। প্রত্যেকদিন হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃত ব্যক্তির সংখ্যা। এই প্রতিষেধকহীন রোগ আমেরিকায় মহামারি আকার ধারণ করেছে। শেষ আপডেট পাওয়া পর্যন্ত আমেরিকায় এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪.৩ লক্ষের অধিক মানুষ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪ হাজার ৬০০ জন।
গবেষকদের দাবি, এই মরণব্যাধি আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নামক ম্যালেরিয়ার ঔষধ অত্যন্ত উপকারী। অনেক রোগীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্পপরিমাণে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন মজুদ থাকায় চিন্তিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গোটা পৃথিবীর চাহিদার ৭০ শতাংশ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন উৎপন্ন হয় ভারতে। কিন্তু ইতিমধ্যেই এরকম একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এমতাবস্থায় এই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন পেতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরও কোনো উত্তর না মেলায় হুঁশিয়ারির সুরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “ভারত যদি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন না পাঠায় তাহলে তার জন্য ভুগতে হবে”।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারত সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং আমেরিকায় প্রয়োজনীয় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন পাঠায়। শুধু আমেরিকাতেই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ঔষধ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার।এই ভয়াবহ বিপদের সময়ে ভারত যেভাবে আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প ট্যুইট করে জানিয়েছেন, “এই ভয়াবহ বিপদের সময়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। ধন্যবাদ ভারত এবং ভারতের জনগণকে। ভারতের এই উপকার আমরা কখনোই ভুলবো না। নরেন্দ্র মোদী শুধু নিজ দেশের সেবা করছেন তা নয়, পাশাপাশি বিশ্বমানবতাকেও সাহায্য করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃঢ় নেতৃত্বের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই”।
ঘনিষ্ঠ বন্ধু নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের তিনটি কারখানা থেকে মোট ২৯ মিলিয়ন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এর ডোজ মার্কিন মুলুকের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। এই খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আপ্লুত ট্রাম্প বলেন, “মোদী সত্যিই একজন দুর্দান্ত ব্যক্তি”।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি ২৯ মিলিয়নের বেশি ডোজ কিনেছি। এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এই ঔষধের বেশিরভাগটাই ভারত থেকে এসেছে। আমি আগেই তাকে এই বিষয়ে অনুরোধ করেছিলাম। সত্যিই মোদী একজন দুর্দান্ত মানুষ।”
এই গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধীরা। তবে ভারত চিরদিনই পৃথিবীর উপকার করে আসছে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু সবার প্রথমে ভারতের চাহিদা মেটাতে হবে। প্রয়োজনীয় ঔষধ রেখে অতিরিক্ত ঔষধ অন্যদেশকে দেওয়া যেতে পারে বলে অনেক কূটনীতিবিদের মতামত।