নিউজপিডিয়া ডেস্ক, ২৭ জুনঃ তাঁর গ্রামে দীর্ঘদিন ইলেকট্রিসিটি ছিলো না। তিনি পড়েননি নাম করা কোনো কোচিং সেন্টারে, আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ছিল অভাব। অথচ সেই জায়গা থেকেই নজরকাড়া ফল করলেন এক ছাত্রী।
মহারাষ্ট্র পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় মহিলাদের মধ্যে তৃতীয় হয়ে চমকে দিয়েছেন ওয়াশিমা শেখ। এমপিএসসিতে ডেপুটি কালেক্টর পদে নিযুক্ত হওয়া এই মেয়ে কোনো মেমসাহেব নয়। মহারাষ্ট্র এর নান্দেদ জেলায় জোশী সিংভি নামে এক গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ওয়াসিমা। ছয় ভাইবোনের মাঝেই বড়ো হয়ে ওঠা। বাবার মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় কাজ করতে পারেন না। মা সামান্য দিনমজুর। ছোটোবেলা থেকেই দেখে এসেছে টাকার অভাবে তার ভাই এমপিএসসিতে বসার সুযোগ পায়নি। তাই ছোটোবেলা থেকেই তাঁর চাপা জেদ ছিল। আর সেই জেদেই এসএসসি পরীক্ষায় নজরকাড়া ফল করে সে প্রচারের আলোয় এলো।
২৬ বছর বয়সি ওয়াসিমার ছোটো বেলার স্বপ্ন ছিল এমপিএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়া। আর সেটা সার্থক হয়েছে। এবিষয়ে ওয়াসিমা বলেন, “আমি ছোটোবেলা থেকেই আমার পরিবার ও আমার গ্রামের মানুষের সমস্যা ও অভাব দেখে এসেছি। এই সব সমস্যার সমাধান করতে পারে সরকার। সরকার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সংযোগ রাখতে একজন মধ্যস্থকারীর প্রয়োজন। আমি সেই মধ্যস্থকারী।”
২০১৮ সালের এমপিএসসির পরীক্ষায় ওয়াসিমা উত্তীর্ণ হয়ে সেলস ট্যাক্স ইন্সপেক্টর পদে নিযুক্ত হয়েছিল। সে আরো উঁচু পদ চেয়েছিল আর এবার এমপিএসসি তে সে তা করতে পেরেছে। শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করেছে ওয়াসিমা। সে তাঁর পরিবারের প্রথম উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে। কোনো রকম কোচিং ছাড়াই সে এমপিএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। শুধু তাই নয় হোস্টেল খরচ দিতে না পারায় মহারাষ্ট্রের একটি ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি গ্র্যাজুয়েট করেছিলেন। ওয়াসিমা তাঁর দাদার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে সহায়তা করেছেন। যখন সে এমপিএসসির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সেই সময় তাঁর দাদা রিক্সা চালিয়ে সংসার ও পড়ার খরচ চালিয়েছে। এরপর সেলস ট্যাক্সের চাকরি পাওয়ার পর তাঁর দাদা আর কাজ করতে দেননি।
একসময় রোজ ছয় কিমি পায়ে হেঁটে কলেজ যাওয়া ওয়াসিমা বলেন, তাঁর দাদা ছাড়াও এক শিক্ষক রয়েছেন যিনি তাঁকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ” আমার জিলা পরিষদ স্কুলের স্যার আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। যদিও তিনি উর্দু তে কথা বলেন। কিন্তু মারাঠি মিডিয়ামেও কোনো অসুবিধা হয়নি।” এছাড়া তাঁর মা ও ভাই ও স্বপ্ন পূরণে পাশে থেকেছে। মাত্র আট দিন আগে বিবাহিত ওয়াসিমা এখন সমাজের অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।