নিজস্ব সংবাদদাতা, নদীয়া: রাজনীতির ময়দানে নামলেও তিনি যে অর্থনীতি ও গণিতের ছাত্রী, সেটা অবগত করালেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সোমবার এক ভিডিয়ো বার্তায় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ বুঝিয়ে দিলেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কীভাবে উন্নয়নকে নিয়ে ভাবতে হয়। পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অধিকাংশ টাকাই খরচ না হওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করলেন তিনি। তিনি মনে করেন, ক্ষুদ্র রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সবার জন্য উন্নয়নে কীভাবে সামিল হতে হয় তা আমাদের শিখতে হবে।
এদিন তিনি বলেন, “প্রতি বছরই আইএসজিপি প্রকল্পে প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ১ থেকে ২ কোটি টাকা পেয়ে থাকে। কিন্তু সেই টাকার প্রায় ৬০ শতাংশই খরচ করতে পারে না পঞ্চায়েতগুলি। কারণ, পঞ্চায়েতের তরফে বড় ধরণের কোনও বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয় না।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ৫ লক্ষ টাকার অধিক দামি দরপত্র বা টেন্ডার আহ্বান করতে গেলে তা অনলাইনে করা বাধ্যতামূলক। এইসব ঝামেলায় জড়াতে চায় না কেউ। তাছাড়া অধিকাংশ জায়গায় তার পরিকাঠামো নেই। আবার কোথাও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হয়নি, কোথাও হলেও ডিজিটাল সিগন্যাল তার সঙ্গে সংযুক্ত নয়।”
কিছুটা ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, “ই-টেন্ডার এড়াতে পঞ্চায়েতগুলি ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করছে। আর সেই টাকা ভাগ হচ্ছে নিজেদেরই মধ্যেই! প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্য ৫০ লক্ষ টাকার কাজ ২৫টি প্রকল্পে হচ্ছে। এক একটি প্রকল্পে মাত্র ৬০ মিটারের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ঠিকঠাক খরচ করলে গ্রামে একটিও কাঁচা রাস্তা থাকার কথা নয়।”
সাংসদের এই বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। এক পক্ষ বলেন, বাংলার গ্রামীণ রাজনীতিতে কনট্রাক্টর ও সিন্ডিকেট রাজের জড়িত থাকার বিষয়টি বুঝে গিয়েছেন দক্ষ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার মহুয়া। এর ফলে মানুষের বৃহত্তর স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ায় চিন্তিত তিনি।
অপর দলের পাল্টা দাবি, নদীয়ায় প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েত তৃণমূলেরই দখলে। আর এভাবে মুখ খুলে নিজ দলের জনপ্রতিনিধিদেরই অকর্মণ্যতা তুলে ধরলেন সাংসদ।
এদিকে বিরোধীরা অভিযোগ করেন, ই-টেন্ডারে কাটমানি নেওয়া যায় না। তাই ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমেই কাটমানি খাচ্ছে তৃণমূল। তাদের দীর্ঘদিনের এই অভিযোগে কার্যত শিলমোহর দিলেন দলেরই সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
যদিও তাঁর বক্তব্যের মাঝে সাংসদ দাবি করেন, ‘তাঁর বক্তব্যকে হাতিয়ার করে হয়তো বিরোধীরা প্রচার করবে। কিন্তু দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণের স্বার্থেই তিনি এসব কথা বলেছেন।’