ওহিদ রেহমান: স্বাধীনতার মাস আগষ্ট। এই অর্জনের নেপথ্যে রয়েছে লাখো শহীদের রক্ত। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, তাঁদের সর্বোচ্চ শ্রম ও মেধাশক্তি ব্যবহার করে এই লড়াই সংগঠিত করে। দেশমাতৃকার মুক্তিই ছিল তাঁদের এক ও অদ্বিতীয় উদ্দেশ্য। সেই স্বদেশ চেতনার সোনালী স্মৃতিচারণ যেমন ইতিহাস, সাহিত্যের পাতায় পাতায় তেমনই বলিউডের রুপোলি ফিতায় ফিতায়। বলিউডের অনেক পরিচালক, প্রযোজক দেশপ্রেমের চূড়ান্ত নমুনা তুলে ধরেছেন তাঁদের সৃজনশীল চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে যা দর্শকদের হৃদয়ে গেঁথে আছে স্থায়ীভাবে। আসুন, আরো একবার পর্দার সেই সুহানা সফরে উঁকি মারি….
হাকীকত : ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পরিচালক, প্রযোজক চেতন আনন্দ, ১৯৬৪ সালে তৈরি করেন বলিউডের অন্যতম সফল দেশপ্রেম গাঁথা ‘হাকীকত’। বালরাজ সাহানী, ধর্মেন্দ্র, অচলা সচদেব, সঞ্জয় খান প্রভৃতি তাবড় তাবড় অভিনেতার অভিনয়ে, এই ছবি দেশমাতৃকার মুক্তির লড়াইয়ের অনবদ্য প্রমাণ্যচিত্র। মরমী চিত্রনাট্যে ছবির প্রতিটি চরিত্র এবং দৃশ্যায়ন ছিল ‘হকীকত’ ছবির ইউএসপি। মাল্টি স্টারার এই ছবিতে, প্রত্যেকেই অনবদ্য স্ক্রীন প্রেজেন্স রেখেছেন। মদন মোহনের সুরে, কাইফি আজমির লেখায়, মোহাম্মদ রফির কন্ঠে, ‘ক্যার চলে হ্যাম ফিদা, য্যানে ত্যান সাঁথীয়ো, অ্যাব ত্যুমহারে হ্যাওয়ালে ওয়াতান সাঁথীয়ো’ শুনলেই গায়ে কাঁটা দেয় সিনেপ্রেমীদের।
শহীদ : বলিউডের দেশপ্রেমের অন্যতম ঠাস বুনোট রচিত হয়েছিল পরিচালক এস এম শর্মার শহীদ চলচ্চিত্রে, যা মুক্তিলাভ করে ১৯৬৫ সালের ১লা জানুয়ারি। ভগত সিং, সুখদেব এবং রাজগুরু আত্মত্যাগের উপর তৈরি এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ‘ভারত কুমার’ খ্যাত অভিনেতা মনোজ কুমার। এছাড়াও ছবিতে ছিলেন কামিনী কৌশল, প্রাণ, প্রেম চোপড়া, নিরূপা রায়, শৈলেশ কুমার, কমল কাপুর, মদন পুরী প্রভৃতি তারকারা। প্রেম ধাওয়ানের সুরে, মোহাম্মদ রফির কন্ঠে ‘অ্যাই ওয়াতান, অ্যাই ওয়াতান হামকো তেরি কসম’ কিংবা সরফরোশি কি তামান্না, অ্যাব হ্যামারে দিল মে হ্যায়…’ সিনেপ্রেমীদের আজও লোমকূপ খাড়া করে। রন্জদ ঠাকুরের চিত্রগ্রহণ ছিল অনবদ্য। ১৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে, এই ছবি সেরার শিরোপা লাভ করে।
পূরব অউর পশ্চিম : ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পূরব অউর পশ্চিম’ দেশাত্মবোধক ছবির সারিতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। এই ছবি পুরোপুরি মনোজকুমার ময়। তিনি একাধারে ছবির পরিচালক, প্রযোজক এবং প্রধান মুখ। মাল্টি স্টারার এই ছবিতে ছিলেন অশোক কুমার, সায়রা বানু, নিরূপা রায়, প্রেম চোপড়া, প্রাণের মতো অসাধারণ সব কুশীলবরা। তাই দশকের পর দশক ধরে এই ছবি দর্শকদের অন্যতম পছন্দের ফিল্ম। মহেন্দ্র কাপুরের কন্ঠে ছবির গান ‘হ্যায় প্রীত জাঁহান কি রীত সদা’ আজও নস্টালজিক করে দেয় সিনেমা ভক্তদের।
দ্য লেজেন্ড অফ ভগত সিং : পরিচালক রাজকুমার সন্তোষীর পিরিয়ড ড্রামা ‘দ্য লিজেন্ড অব ভগত সিং’, দেশপ্রেমের অন্যতম চূড়ান্ত দলিল। যদিও ভগত সিংহের জীবনী নির্ভর একাধিক সিনেমা রয়েছে বলিউডে। তবে, এই ছবিতে ভগত সিং এর চরিত্রে অজয় দেবগনের অভিনয় সিনেপ্রেমীরা কখনো ভুলবে না। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য অভিনেতা অজয় দেবগনে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। সুরকার এ.আর রহমানের সুরে এই ছবির প্রতিটি গান ছিল দেশাত্মবোধের নতুন ফিউশন। ছবিতে অজয় ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুশান্ত সিং, ডি সন্তোষ, আখিলেন্দ্র মিশ্রা এবং আরো অনেকে। একবিংশ শতকে নির্মিত দেশাত্মবোধক ছবির তালিকায় এই ছবি অন্যতম সেরা।
লগান : একবিংশ শতকের শুরুতেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস সৃষ্টিকারী ছবি লগান। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি অস্কারের সেরা বিদেশী ছবি বিভাগে মনোনীত হয়। পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকরের এই ছবি, দেশাত্মবোধের নতুনধারা উপস্থাপন করে ক্রিকেটের মাধ্যমে। ব্রিটিশ ভারতের চম্পারন কে কেন্দ্র করে এই ছবি। ছবিতে ‘খাজনা’ মকুবের চ্যালেঞ্জ আসে গোরাদের ক্রিকেট ম্যাচ হারানোর মধ্যে দিয়ে, যা তৎকালীন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অভাবনীয় ছিল। ছবিতে ‘ভুবন’ চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেন মিঃ পারফেকশনিস্ট আমির খান। এছাড়াও ছিলেন, গ্রেসি সিং, রচেল শেল্লি, পর ব্লাচথোর্ন, সুহাসিনী মূলে, কুলভুষণ খারবান্দা, যশপল শর্মা প্রভৃতি অভিনেতা। এ.আর রহমানের সুরে এই ছবির গান তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
বলিউডের দেশপ্রেমের সিনেমার তালিকা সমৃদ্ধ। বিংশ শতাব্দীর পাঁচের দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর এইসময় পর্যন্ত বলিউড আমাদের উপহার দিয়েছে দেশপ্রেমের এক একটি ক্লাসিক ছায়াছবি। তাই, পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমরা আরও কিছু ছবির নাম উল্লেখ করে রাখছি….
জুনুন ( ১৯৭৮)
ক্রান্তি (১৯৮১)
বর্ডার (১৯৯৭)
স্বদেশ (২০০৪)
মঙ্গল পান্ডে (২০০৫)
চিটাগাং ( ২০১২)
রাজি (২০১৮)
উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (২০১৯)