
জাহাঙ্গীর হোসেন, দ্য থার্ড আই : করোনার জেরে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে চলছে লকডাউন, সেই লকডাউনের প্রভাব দেশের প্রতিটি নাগরিকের উপর পরেছে। কিন্তু এই লকডাউনের অন্য এক ভয়াবহ চেহারা দেখছে কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরের মানুষ গুলো। দিনহাটা-২ এর কুর্শাহাট, ধাপরাহাট, চৌধুরীহাট, নটকোবাড়ি ইত্যাদি জায়গা দিয়ে ভারতীয় সীমানা সরাসরি বাংলাদেশ কে ছুঁয়েছে। সেই সীমান্তের কাঁটাতারে ভারতীয় বিএসএফ জওয়ানরা রাত দিন পাহারা দেয়, এবং কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে যে সমস্ত মানুষ বসবাস করে, তাদেরকে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে গেট খুলে দেওয়া হয়, বাইরে বের হতে, কিংবা ভেতরে প্রবেশ করতে।আর সেই সময় যদি কোনো ব্যক্তি অতিক্রম করে ফেলে, তাহলে তার সেদিনের মত বাড়িতে ফেরা অনিশ্চিত।
কাঁটাতারের ভেতরে বিদ্যুৎ নেই, ইচ্ছে মতো হাট বাজার যাওয়ার সুযোগ সুবিধা নেই, তাছাড়াও আছে আরও বিভিন্ন রকমের সমস্যা। তবে এই সমস্যা আরও বেড়েছে লকডাউনে ।
প্রধানমন্ত্রী দেশ লকডাউন ঘোষণা করার পর পরই বিএসএফ জওয়ানরা জানিয়ে দেন যে গেট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। এই কথা শুনে আকাশ ভেঙ্গে পরে অনেকের মাথায়, সরকার কৃষকদের জন্য যে ছাড় দিয়েছেন সে কথাও মানতে নারাজ বিএসএফের কমান্ডার। এলাকাবাসীর কথায় জানা যায় শুধু সপ্তাহে রবিবার সকাল দশটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত গেট খোলা থাকলেও কাউকেই পারাপার হতে দেয় না এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও আদৌও তা পালন করছেন না বিএসএফ জওয়ানরা। জওয়ানদের এহেন আচরণ রীতিমতো উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক এক ব্যক্তির বক্তব্য, “বিএসএফ জওয়ানরা নিজেদের ইচ্ছামত কাজ করছেন, ওদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাইরাসের সুযোগ নিয়ে ওরা আমাদের চরম অসুবিধার মধ্যে ফেলবে, যাতে করে আমরা কাঁটাতারের ভেতর থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হই, এবং যে কোনো বিষয়ে যদি কেউ প্রতিবাদের সুর তোলে তবে তাকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।”
অন্য একজন কাঁটাতারের ভেতরের বাসিন্দা জানান, “বিএসএফের কমান্ডার বলেছেন যে,গেট বন্ধ থাকবে, তোমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পঞ্চায়েত ফ্রিতে তোমাদের দিয়ে যাবেন। কিন্তু পঞ্চায়েত জিনিসপত্র ফ্রিতে দেওয়া তো দুরের কথা, এমনকি কথাও বলতে আসছেন না আমাদের সাথে”।গেট না খোলায় সেখানকার বাসিন্দারা সরকারি কোনো অনুদান যেমন পাচ্ছেন না, তেমনি তারা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি রেশন থেকেও।
বিএসএফ কমান্ডার বলেন, “ভাইরাসের জন্য গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ভাইরাস শেষ হলে আবার স্বাভাবিক ভাবেই গেট খোলা হবে।” সুতরাং এই অনির্দিষ্ট কালের জন্য গেট বন্ধ থাকার দরুন এলাকাবাসী রীতিমত আতঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধ। প্রশ্ন উঠছে ভাইরাসের প্রকোপ যদি আরও ছ’মাস থাকে তাহলে কি তারা না খেয়ে থাকব? এখনো পর্যন্ত মেলেনি কোনো সরকারি সাহায্যে, রয়েছে গেট খোলার অনিশ্চয়তা, অনাহারে থাকার আশঙ্কায় চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে কাঁটাতারের ভিতরের বাসিন্দারা ।