আজ একটি বিশেষ দিন। মুসলমানদের ঈদ আর হিন্দুদের অক্ষয় তৃতীয়া। আসলে কিন্তু একটা শুভ আনন্দের দিন।করোনা অতিমারিতে দুঃখের মধ্যে ও অনেক কিছু বার্তা ঈশ্বরের আমাদের কাছে পাঠাচ্ছেন ।গত পঁচিশে বৈশাখ মাতৃদিবস ছিল।আর আজ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুভ ঈদ। এর মধ্যেই নিহিত আছে সেই বিশেষ বার্তা।আমরা হিন্দু মুসলমান জাতসূত্রে ধর্মসূত্রে আলাদা হলেও আমাদের শরীরে বইছে সেই রক্ত যার রঙ এক ও অভিন্ন …..লাল।হিন্দু আর মুসলমান ধর্মের লোকেরাও মানুষ। আর এই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা যাঁর কোন ধর্ম নেই।
আজকে একটা বিশেষ দিনে আসুন না সবাই এক হয়ে আমাদের পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলি।পৃথিবীর মানুষগুলোকে রক্ষা করি।যখন সুস্বাদু বিরিয়ানি আমরা আস্বাদন করি তখন কি মনে রাখি এই বিরিয়ানির রন্ধনকারী হিন্দু না মুসলমান?গ্রীষ্মকালে আম,লিচু বাজার থেকে কিনে খাওয়ার আগে ভেবে দেখি কি এই ফলগুলো মুসলমানদের বাগানের না হিন্দুদের বাগানের?আজ করোনা অতিমারিতে বাড়িতে ওষুধ, খাবার, অক্সিজেন যারা পৌঁছে দিচ্ছে তাদের জাত কি আমরা জানতে চাই?নাকি ডাক্তার, নার্স,অ্যাম্বুলেন্স চালক তারা কোন জাতের সেটা আমরা জানতে চাই?তাহলে কেন এই বিভেদ সাধারণ মানুষের মধ্যে?কেন হিন্দু ধর্মকে আঘাত আর মুসলমান ধর্মকে আঘাত করার জন্য সাধারণ মানুষ এক কুৎসিত খেলায় মেতে উঠেছে।
আজ হয়তো এই করোনা মহামারীতেই অক্ষয় তৃতীয়ার সূর্যের আলোয় ঈদের চাঁদ আলোকিত হয়েছে অর্থাৎ সূর্য আর চাঁদের আলো একে অপরের ওপর বিলীন হয়ে গেছে। এটা কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়।ঈশ্বর এই ঘটনা দিয়ে আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন হিন্দু মুসলমান সকলেই তাঁর সন্তান। তিনি মানুষ গড়েছেন।কিন্তু ধর্ম গড়েন নি।ধর্ম সৃষ্টি করেছে তাঁর সৃষ্ট মানুষ। তাই আসুন আমরা এই অতিমারিতে আবার সকলে একই সূত্রে নিজেদের বেঁধে ফেলি ভালোবাসার বন্ধনে।কাজী নজরুল ইসলামের সুরে সুর মিলিয়ে বলি,”মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান ,মুসলিম তার নয়নমণি,হিন্দু তাহার প্রাণ। আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩১৪ সনে “প্রবাসী”তে লিখেছিলেন, ” আমরা এক দেশে এক সুখ দুঃখের মধ্যে একত্রে বাস করি,আমরা মানুষ,যদি এক না হই তবে সে লজ্জা, সে অধর্ম।”
তাই আসুন আমরা আজ দেশের অতিমারিতে হিন্দু মুসলমান ভাইবোন একত্রিত হয়ে শুভ অক্ষয় তৃতীয়া আর শুভ ঈদের আনন্দে মেতে উঠে মনের সমস্ত মলিনতা ভুলে দ্রুত পৃথিবী ও পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতির সুস্থতা কামনা করি।
কলমে: জয়ন্তী বন্দোপাধ্যায় মুখার্জি (লেখিকা, শিক্ষিকা, সঙ্গীত শিল্পী, সমাজসেবিকা আর সর্বোপরি গৃহবধূ)