নিজস্ব সংবাদদাতা, মালবাজার: করোনা পরিস্থিতিতে সমগ্র মালবাজার মহকুমা জুড়েই করোনা আক্রান্তদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে রেড ভলান্টিয়ার এর সদস্য বৃন্দ। মহকুমার চাবাগান এলাকা থেকে শুরু করে গ্রাম এমনকি মালবাজার শহরের অলিতে গলিতে করোনা আক্রান্ত সহ দুস্থ মানুষদের লকডাউনের সময়ে নিরলসভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। রেড ভলান্টিয়ারদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে মহকুমার বিভিন্ন মহল। এদিন মহকুমার নতুন ব্লক ক্রান্তির আনন্দপুর চাবাগান এলাকায় রেড ভলান্টিয়ার কর্মীরা বহু বাড়ি এবং রাস্তাঘাট স্যানিটাইজ করেন।
ক্রান্তির বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই এর লোকাল কমেটির সম্পাদক সাবির হোসেন বলেন, “আমরা আনন্দপুর চাবাগানে এসেছি। এখানে তিনটি বস্তি মিলিয়ে প্রায় ৩১ জন ব্যাক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখানকার মানুষেরা আমাদের খবর দিলে, আমরা সকল কর্মীরা এসে তিনটি বস্তিতে সকাল থেকেই স্যানেটাইজ করছি। প্রসঙ্গত তিনি আরো বলেন সরকারি ভাবে কোন সাহায্য পাচ্ছে না এই বস্তির মানুষেরা। তাই ক্রান্তির রেড ভলান্টিয়ারের কর্মীরাই এখানে স্যানেটাইজ এর পাশাপাশি গ্রামের সকল মানুষকে মাস্ক বিতরন করা হয়েছে। পরবর্তীতে সাধ্যমতো অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে। যেকোনো অসুবিধায় পরলে, আমাদের ডাকলেই আমাদের কর্মীরা পৌছে যাবে।”
এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রেড ভলান্টিয়ারের মুন্না, আব্দুল মজিজ, রফিক, আমিনুল সহ অন্যান্যরা।
অপরদিকে মহকুমার ওদলাবাড়ি, ডামডিম, চালসা, মালবাজার এলাকাতেও ক্রমাগত ভাবে রেড ভলান্টিয়ারদের কর্মকান্ড জারি রয়েছে। এলাকা স্যানিটাইজ করা থেকে শুরু করে দুস্থ মানুষদের খাদ্য সামগ্রী , প্রয়োজনীয় ঔষুধ সহ অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করে চলেছেন রেড ভলান্টিয়ার এর সদস্যবৃন্দ। মালবাজার শহরের রেড ভলান্টিয়ার সদস্যরা এলাকার দুস্থ মানুষদের দৈনন্দিন দুপুরের আহারের সুবন্দোবস্ত করে চলেছেন। এদিনও তার অন্যথা হয় নি। প্রসঙ্গত রেড ভলান্টিয়ার সদস্য তথা বামপন্থী ছাত্র যুব নেতা ঋষভ রায়, সমীর সিংহ, শুভম নন্দী, রিতন দাস, প্রমুখ বলেন, ” আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শহরের দুস্থ, ভবঘুরে এবং করোনায় আক্রান্ত দুস্থ মানুষদের দুপুরে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। যাতে মানুষগুলোন ভরপেট খেয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। সাথে আমরা এলাকার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলন স্যানিটাইজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং দুস্থ মানুষদের প্রয়োজনীয় ঔষধ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে”। প্রসঙ্গত সমীর সিংহ বলেন, ” আমাদের এই কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধুই সহযোগিতাই নয় আমাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন যা আমাদের এই কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছে এবং আমাদের আগামীদিনের কাজের পথকে আরও প্রশস্ত করছে।” লকডাউনের ফলে শহরের হোটেল রেস্তোরা বন্ধ থাকায় পথের সারমেয়দের জন্য দ্বিপ্রাহরিক আহারের বন্দোবস্তও রেড ভলান্টিয়ারের উদ্যোগে করা হয়েছে বলে সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে মহকুমার ওদলাবাড়ি এলাকার রেড ভলান্টিয়ার সদস্যরা আগামীকাল রক্তসংকট মেটাতে রক্তদান কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। প্রসঙ্গত রেড ভলান্টিয়ার সদস্য জবা সরকার, জয়ন্ত চ্যাটার্জী প্রমুখ বলেন, “বর্তমানে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে রক্তসংকট দেখা দিয়েছে। সেই সংকট মেটাতে আমরা রক্তদান শিবির করছি আগামীকাল। মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের সহযোগিতায় এই রক্তদান শিবির আয়োজিত হবে। শিবির থেকে সংগৃহীত রক্ত মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে প্রদান করা হবে।” এদিনও ওদলাবাড়ি এলাকার শ্মশান ঘাট সহ বিভিন্ন এলাকা স্যানিটাইজ করা হয়েছে বলে রেড ভলান্টিয়ার সদস্যরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে মহকুমার ডামডিম, চালসা, মেটেলি, নাগরাকাটা এলাকাতেও রেড ভলেন্টিয়ার সদস্যদের উদ্যোগে এলাকা স্যানিটাইজ করা , করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা, দুস্থদের খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া সহ অন্যান্য কাজেও নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছেন বলে জানানো হয়েছে। চালসা ও ডামডিম এলাকার রেড ভলান্টিয়ার সদস্য বিকাশ দেব রায় ও রোহিত পাশি বলেন,”এই করোনা অতিমারীতার সময়ে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত ও অসহায়। তাদেরকে সহযোগিতা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। রাজনীতির উর্ধে উঠে দলমত নির্বিশেষে আমরা শুধু মহকুমা জুড়েই নয় সমগ্র রাজ্য জুড়েই আমাদের তরফে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। যা আমাদের এই কাজের গতিবেগকে বৃদ্ধি করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।”