দেশের রাজা দেশের প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ দেড় লক্ষ লোক নিয়ে নিজস্ব হেলিকপ্টার নিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটা রাজ্য জয় করতে এলেন। নানা রকম নাটকীয়তার মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন জোর করে দেশের মুখ্যমন্ত্রীর গতি কেড়ে নিতে অন্যায় ভাবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতাকে প্রথম থেকেই ভয় পেতেন তাই কোন নেতা নেত্রী নয় নিজেই দিল্লির মসনদ থেকে বারবার এ রাজ্যে এসেছেন প্রচার করতে। কি আশ্চর্য নিজের ক্ষমতার জাহির করার জন্য দেশের রক্ষক হয়ে উঠলেন ভক্ষক। যিনি দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য একদা লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন তিনিই করোনার সমস্ত বিধি নিষেধ ভুলে নিজের দলের লোকেদের নিয়ে জমায়েত পদযাত্রা মিছিল শুরু করলেন। তাঁর দেখাদেখি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও নিজের গদি বাঁচাতে একই পথ অনুসরণ করলেন। দুই দল ভুলে গেলেন করোনা মহামারীর কথা আর তারফলে সাধারণ মানুষের জীবনে মৃত্যুর মিছিল নেমে এল। এতো গেল দুদলের প্রচারের কথা।কিন্তু দেশের রাজা যে অন্যায় করলেন সেটা আমরা দেখে নিই ভালো করে।হিন্দু ধর্মের দোহাই দিয়ে হিন্দু মুসলমান ভাইবোনদের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে শুরু করলেন। ভুলে গেলেন আমাদের দেশ রবীন্দ্রনাথ আর কাজী নজরুল ইসলামের দেশ। আমাদের দেশ গান্ধীজী আর মৌলনা আবুল কালামের দেশ।
এরপর যা করলেন সেটা আরো ঘৃণ্য। মুখ্যমন্ত্রীর দল থেকেই বহু লোককে অর্থ দিয়ে কিনে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলেন। দেশের রাজা একটা মাত্র রাজ্য জয়ের জন্য নিজে হাতে বিভীষণ আর মিরজাফরের জন্ম দিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী দমেননি তিনি হুইল চেয়ার করেও শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন।তবু ও ভোট তো জনগণের হাতে ছিল তাই অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম।কিন্তু রাজ্যের প্রজারা এত মুখ্য নয় তাই সব কিছু ধূলিসাত্ করে নিজের মাটির মানুষকেই আবার ফিরিয়ে এনেছে। আর যাই হোক বহিরাগতদের বিশ্বাস করার চেয়ে ঘরের মানুষকে বিশ্বাস করাই শ্রেয় এটাই রাজ্যের লোক মেনে নিয়েছে। আর এই বছর করোনা অতিমারির মধ্যে কেন্দ্র থেকে আনা মিলিটারিদের উপস্থিতিতে এই জয়ে কোন কারচুপি ছিল না। এ জয় বাঙালির জয়।এ জয় নারীর জয়। এই নির্বাচনে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর পরাজয় হলে সমগ্র নারী জাতির অপমান হত। আজ একজন মহিলা হয়ে সত্যি গর্ববোধ করছি।
তবে একটা যুদ্ধ শেষ হলে ও আসল যুদ্ধ বাকি আছে। তাই সাধারণ জনগণকে মনে রাখতে হবে করোনার বিধি নিষেধ। মনে রাখতে হবে অতিমারিতে দেশের করুণ অবস্থার কথা আর তাই জয়োল্লাসের অতিরিক্ত আনন্দ যাতে অতিমারি বৃদ্ধির কারণ না হয় তা মাথায় রেখে দেশের পুনরায় নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে বরণ করতে হবে। আর যারা এই জয় মেনে না নিয়ে সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা জনগণ যখন তাদের ভোটে এই সরকার এনেছে তখন সমালোচনা না করে সরকারকে কাজ করার সুযোগ দিন আর পাশে থাকুন, না হলে তো ব্যালট বক্স আছেই পাঁচ বছর পর তাদের বুঝিয়ে দেবেন জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার ফল ভালো হয় না। এখন সব ভুলে করোনা অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ থেকে রাজ্য তথা সমগ্র দেশকে রক্ষা করার জন্য সরকারকে আবেদন করুন আর পাশে থাকুন। এই যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করলে তবেই কিন্তু বিরোধীতা করতে পারবো। এই যুদ্ধে আমাদের একত্রিত হয়ে জিততে হবে হ্যাঁ জিততে হবেই। ঈশ্বর করুণাময়। তিনি মানুষের শ্রেষ্ঠা কোন জাত বা ধর্মের শ্রষ্ঠা তিনি নন। তাঁর কাছে সবাই সমান।
কলমে: জয়ন্তী বন্দোপাধ্যায় মুখার্জি (লেখিকা, শিক্ষিকা, সঙ্গীতশিল্পী, সমাজসেবিকা, সর্বোপরি গৃহবধূ)