
রবিউল হোসেন: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে শুরু করেছে চীনের। ইতিমধ্যে সুইডেনের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতি ঠেকেছে চরমে। সুইডেন সরকার তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চীনের প্রভাব কমাতে সকল কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চীনা সরকারের অর্থায়নে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচারের লক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট তাদের কার্যক্রম চালায়।
দ্য টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনই প্রথম দেশ যারা কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এবং ক্লাসরুম বন্ধ করছে।
এছাড়া টাইমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সুইডেন ও চীনের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ‘শত্রুতাপূর্ণ ও পারস্পরিক সন্দেহের দিকে’ চলে গেছে। সেইসঙ্গে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ওপর বেইজিংয়ের ‘মগজ ধোলাইয়ের’ প্রচেষ্টা নিয়ে সুইডিশ সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সুইডিশ সরকার চারটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বন্ধ করে দেয়। শুধু দেশটির দক্ষিণের শহর ফ্যালকেনবার্গে মাত্র একটি কনফুসিয়াস ক্লাশ চালু রাখে।
এর মধ্যে গত সপ্তাহেও ওই ক্লাশ স্থগিত করা হয়েছে। সুইডিশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের এশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান জর্ন জারডেন, এসব কার্যক্রমকে চীনের সঙ্গে সুইডেনের নীতির যে পরিবর্তন ঘটছে তার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন চীনের এসব ইনস্টিটিউট বন্ধ করার পেছনে থাকতে পারে অন্য কারণ। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সম্পর্কে সমালোচনামূলক বই বিক্রির জন্য সুইডিশ বই বিক্রেতা গুই মিনহাইকে গ্রেফতার করে চীন। এরপরই দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গায় ফাটল শুরু হয়।
চীনের রাজনৈতিক প্রভাব পড়ছে এমন বিষয় অভিযোগ উঠার পর এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। রেডিও ফ্রান্সের ইন্টারনেশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাইওয়ানের স্বাধীনতা, চীন কমিউনিস্ট পার্টি ও তিব্বতিদের মধ্যে মামলাসহ অনেক সংবেদনশীল বিষয় ক্লাসরুমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গোথেনবারগের মেয়র অ্যাক্সেল জোসেফসন রেডিও সুইডেন’কে বলেন, গত তিন বছরে দুই শহরের মধ্যে আদান-প্রদান নূন্যতম পর্যায়ে ।
মেয়র ঘোষণা করেন, উহানে করোনভাইরাস সঙ্কট এবং চীনের সঙ্গে টানটান সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা দ্বি-শহর চুক্তি বাড়ানো উপযুক্ত মনে করি না।
১৯৮৬ সালে গোথেনবারগ ও চীনের সাংঘাই শহরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। এবং পরবর্তীতে দুই শহরের মধ্যে সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিনিময় ঘটাতে ২০০৩ সালে চুক্তিটি আরও প্রসারিত করা হয়। এভাবে বছরের পর বছর চুক্তটি নবায়ন করা হলেও ২০১৯ সালের শেষের দিকে এই চুক্তির সমাপ্তি ঘটে।
সুইডেনের গোথেনবারগ ও চীনের সাংঘাই এই দুই শহর ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিন্ন করার তালিকায় আছে দেশ দুইটির লুলেয়া ও শি’আন , ভাস্তেরাস ও জিজান এবং ডালারনা ও উহান শহর।
লিঙ্কপিংয়ের মেয়র লারস ভাইকিঙ্গে এক সুইডিশ পত্রিকায় বলেন, চীনা দূতাবাস সুইডিশ সরকারকে হুমকি দেওয়ার প্রেক্ষিতে চীনের সঙ্গে এই শহর সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
এছাড়া ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে ভাস্তেরাসের মেয়র আন্দ্রেস টেলজেব্যাক, চীনের সাম্প্রতিককালের দমন নিপীড়ন বৃদ্ধিকে সম্পর্ক ছিন্নের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নরওয়েনিউজ অবলম্বনে।