সোমনাথ দত্ত, মালবাজার: গত কয়েক দিন ধরেই ডুয়ার্সের সমগ্র এলাকা ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় চলছে প্রবল বৃষ্টিপাত। ফুলেফেঁপে উঠেছে ডুয়ার্স অঞ্চলের সমস্ত নদী ও পাহাড়ি ঝোড়া। ভরা বর্ষার কারণে এলাকায় ছোটো বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। সোমবার রাতে মালবাজার ব্লকের দুই পৃথক স্থানে ধসে পড়ে জাতীয় সড়ক সেতুর একাংশ। সেখানে কলা বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান সেতু ভেঙে নিচে পরে যায়। মৃত্যু হয় পিকআপ ভ্যানে থাকা চালক সহ এক আরোহীর। মৃতদের নাম রাজু শেক (৩৫) ও দেবরাজ সাহা(৩৬)। তাদের বাড়ি আসামের গোয়ালপাড়া এলাকায়। গাড়িটি আসাম থেকে কলা বোঝাই করে ডুয়ার্স এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া ৩১নং জাতীয় সড়ক ধরে শিলিগুড়ি অভিমুখে যাচ্ছিল।
অন্য দিকে লিস নদীর প্রবল জলস্রোতে রেলসেতুর পশ্চিম পাড়ের মাটি সম্পূর্ণ ধসে পরে। ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার গামী রেলপথের একটা বড় অংশ। বর্তমানে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় কোনোরকম দুর্ঘটনা এই পথে ঘটেনি।

জানা গেছে, সোমবার রাতে পাহাড়ি ও সমতল এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়। প্রবল বর্ষণের কারণেই ফুলেফেঁপে ওঠে মাল ব্লকের বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জুরন্তি ও লিস নদী। জুরন্তি নদীর প্রবল জলস্রোত জাতীয় সড়ক সেতুর পূর্ব অংশকে ধসিয়ে দেয়। ভেঙে পড়ে সেতুর উপরের থাকা স্ল্যাব।
সোমবার রাত ৩.৩০ মিনিট নাগাদ তিনটি কলা বোঝাই পিকআপ ৩১নং জাতীয় সড়ক ধরে মালবাজারের দিক থেকে শিলিগুড়ি অভিমুখে যাচ্ছিল। প্রথম পিকআপ ভ্যানটি বুঝতে না পেরে স্ল্যাবের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে নিচে পড়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মালবাজার থেকে দমকল ও একটি রিকভারি ক্রেন নিচে পরে যাওয়া পিকআপ ভ্যানটিকে উদ্ধার করে। সাথে সেই পিকআপ ভ্যান থেকে চালক ও এক আরোহীর দেহ উদ্ধার করে দমকল কর্মীরা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান মালবাজার মহকুমা শাসক শান্তুনু বালা, এস ডি পি ও দেবাশীষ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সড়ক দপ্তরের কর্মীরা। মাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দেবাশীষ চক্রবর্তী জানান, পিকআপ ভ্যানটি পড়ে যাওয়ার ফলে ওই গাড়িতে থাকা চালক ও আরোহীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় জাতীয় সড়কে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ডুয়ার্স থেকে শিলিগুড়ির যাতায়াতের লাইফ লাইন ৩১নং জাতীয় সড়ক।

জাতীয় সড়ক দপ্তরের বাস্তুকার জানান, দ্রুত সেতুর ভাঙা অংশ মেরামত করে ৩১নং জাতীয় সড়ক পুনরায় চালু করা হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই জুরন্তি নদীর জলপ্রবাহে ধসিয়ে দিয়েছিলো জাতীয় সড়ক সেতুর খানিকটা অংশ বেশ কয়েক বছর আগেই। সেবারও মেরামত করা হয়। অন্য দিকে লিস নদীর প্রবল জলস্রোত বাগরাকোট ও ওয়াসাবাড়ি চা বাগানের মাঝে রেল সেতুর গার্ড ওয়াল ভেঙে মাটি ধসিয়ে দেয়। ভেঙে যায় সেতুর গার্ডার। ঝুলতে থাকে রেললাইন। লকডাউনে রেল চলাচল না থাকায় কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দ্রুত ওই অংশ মেরামত করা হবে। গত কয়েকদিন ধরে সমগ্র এলাকায় চলছে ভারী বৃষ্টিপাত। উত্তাল হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাহাড়ি ঝোড়া ও নদী। ডুয়ার্সের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে নদী ভাঙন ও ধস। সোমবার রাতের নদী ভাঙন ও ধসে বিরাট ক্ষতি হলো জাতীয় সড়ক ও রেল পথের। দ্রুত মেরামত না হলে যোগাযোগ ব্যাহত হবে। ডুয়ার্সের সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। কারণ ডুয়ার্স অঞ্চলের সাথে শিলিগুড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল সড়ক পথ ও রেলপথ সম্পূর্ণ ভাবে আজ বিপর্যস্ত হলো।