মিডিয়ার হালচাল
(শুরু হল নিউজপিডিয়ার নতুন কলাম। মিডিয়ার অন্দরমহল ও মিডিয়া সংক্রান্ত সব খবরের বিস্তারিত বিবরণ এখানে থাকছে। তবে কলামটি কোনো দিনক্ষণ দেখে প্রকাশিত হবে না। যে কোনো দিনই প্রকাশিত হতে পারে।)
ত্রিদিবেশ বর্মন
সম্প্রতি চিন ভারতের গালওয়ান উপত্যকায় আক্রমণ করে বেশ কিছু ভারতীয় সেনাকে হত্যা করে। সেই প্রেক্ষিতে জি নিউজ সহ বেশির ভাগ ভারতীয় মিডিয়া চিনকে বয়কটের জিগির তোলে। ঠিক সেই সময় রাজ্যসভা সাংসদ তথা জি মিডিয়া গ্রুপের মালিক সুভাষ চন্দ্রার চিনা কনস্যুলেটকে বাংলো ভাড়া দিয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই অনেকে জি মিডিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগে সরব। ‘স্কোয়ার ফিট ইন্ডিয়া’ নামে এক রিয়াল এস্টেট ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী, মুম্বাইয়ে সুভাষ চন্দ্রার বাংলো দু’বছরের জন্য চিনা কনস্যুলেটকে দেওয়া হয়। এ বছরের ১ জুলাই মুম্বাইয়ের রেজিস্ট্রেশন অফিসে চুক্তি রেজিস্টার করা হয়। যদিও ২৯ জুন চুক্তির সমস্ত কাগজপত্র তৈরি ছিল। এর আগে ১৫ জুন চন্দ্রা তাঁর অন্যতম আইনি সহায়ক ভৌপাতিল আরোতের সঙ্গে চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা সারেন। তারপর ২৯ জুন সুভাষ চন্দ্রার পক্ষে ভৌপাতিল আরোতে রিপাবলিক অব চায়নার ভাইস-কনস্যুল হুয়াং জিয়াংয়ের সঙ্গে চুক্তিপত্রে সই করেন। গোটা সইসাবুদ প্রক্রিয়া মুম্বাইয়ে হয়। ১ জুলাই থেকেই ভাড়া কার্যকর হয়। ভাড়া বাবদ জি নিউজের প্রোমোটার সুভাষ চন্দ্রার পকেটে মাসে ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ঢুকবে।
Here are the documents that show the transactions between Subhash Chandra regarding his property with Chinese Consulate.
Pic1: Registration
Pic2: POA by Chandra to Bhaupatil Arote https://t.co/LJq0f15F5a pic.twitter.com/ekzwLQsJlu— Singh Varun (@singhvarun) July 30, 2020
স্কোয়ার ফিট ইন্ডিয়া ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা বরুণ সিং প্রথম এই খবর প্রকাশ্যে আনেন। তিনি চুক্তিপত্রের রেজিস্ট্রেশন কপি টুইট করেন।
দক্ষিণ মুম্বাইয়ের কাফে প্যারেডের জলি মেকার ওয়ানে সুভাষ চন্দ্রার বাংলোটি অবস্থিত। এই জায়গাটি মুম্বাই তো বটেই, ভারতেরও অন্যতম অভিজাত হাউজিং সোসাইটি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই সোসাইটির ভিতর দুটি ২৫ তলা টাওয়ার এবং ১০ টি বাংলো রয়েছে। সুভাষ চন্দার পেল্লাই সাইজের ওই বাংলোটি ২৫৯০ স্কোয়ার ফুটের। গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে একটি লিভিং রুম ও একটি কিচেন, দোতলায় রয়েছে তিনটি বেডরুম ও একটি বাচ্চাদের রুম। এছাড়া তিনতলাতেও ঢাউস সাইজের বেডরুম রয়েছে। দুটো পার্কিং স্পেসও চিনা কনস্যুলের জন্য বরাদ্দ। ওই ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী, বাংলোটি সরকারি কাজে নয়, শুধুমাত্র চিনা কনস্যুলেটের বসবাসের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, নয় মাসের আগে চুক্তিভঙ্গ করা যাবে না। এছাড়া চুক্তিভঙ্গের অন্তত তিন মাস আগে পরস্পরকে নোটিশ দিতে হবে।
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এই চুক্তি ভঙ্গ করা যেতে পারে। বলা হয়েছে, “যদি ভারত সরকার অথবা চায়না সরকার মুম্বাইয়ে লক-ইন-পিরিওডে (চুক্তির সময়কালে) চিনের কনস্যুলেট জেনারেলের অফিস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এই চুক্তি ভঙ্গ করা যাবে।’’
চিনা কনস্যুলেট ইতিমধ্যে বিজেপি সমর্থিত নির্দল এই সাংসদকে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা আগাম হিসাবে চেকের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। এতে নয় মাসের ভাড়া এবং রিফান্ডেবল ডিপোজিট হিসাবে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ধরা আছে। ওই ওয়েবসাইটের তরফে চন্দ্রা ও চিনা কনস্যুলেট উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কারো তরফে কোনো জবাব আসেনি। এমনকি ‘নিউজলন্ড্রি’ও সুভাষ চন্দ্রার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হল, ভারত-চিন সীমান্তে যখন প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতে সৃষ্টি হয় এবং এর ফলস্বরূপ ২০ জন বীর সৈনিককে চিনা বাহিনীর হাতে প্রাণ দিতে হয়, ঠিক সেই সময় এই চুক্তির চূড়ান্ত রূপরেখা আঁকা হয়। অন্যান্য নিউজ চ্যানেলের মতো সুভাষ চন্দ্রার মালিকাধীন জি নিউজে ক্রমাগত চিনের মুণ্ডুপাত করা হয়। সেই সঙ্গে চিনের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকার ও দেশবাসীকে আহ্বান জানায় জি মিডিয়া। চিনা সামগ্রী বয়কটের উদ্দেশ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা চলে জি মিডিয়ার সব চ্যানেলে। অথচ সেই জি নিউজের মালিক কিনা চিনা কনস্যুলেটকে বাংলা ভাড়া দিচ্ছে! সত্য সেলুকাস! কী বিচিত্র এই জি নিউজ!