নিউজপিডিয়া ডেস্ক: একবার ফের চিনা ষড়যন্ত্রের পাল্টা জবাব দিতে তৎপর হয়েছে ভারত। তবে এবার হাতিয়ার করা হয়েছে প্রকৃতিকে। তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রের বুকে ‘মেগা ড্যাম’ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করছে চীন সরকার। তারই পালটা জবাব দিতে অরুণাচল প্রদেশে ‘মহাবাহু’র উপর বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লি।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, চীনা সরকার ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ১০ গিগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্প থেকে হওয়া সমস্যা ও কুপ্রভাব ঠেকাতে ভারত সরকারও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। জলসম্পদ মন্ত্রকের প্রবীণ আমলা টিএস মেহতা তার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। এই মর্মে সরকার একটি প্রস্তাবও পেশ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। উচ্চ স্তরে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। অরুণাচল প্রদেশে ব্রহ্মপুত্রের বুকে একটি বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে যার মাধ্যমে জল ধরে রাখতে একটি বিশাল জলাধার তৈরি করা হবে। ফলে চিনা বাঁধ থেকে আচমকা জল ছাড়লে হড়পা বানের আশঙ্কা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যাবে। এর ফলে জলসংকটও অনেকটা কমে আসবে।
ইয়ারলাং জ্যাংবো নামে একটি নদী চিন অধিকৃত তিব্বতের উৎসস্থল থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অরুণাচলে প্রবেশ করেছে সিয়াং নামে। এরপর অসমে প্রবেশ করে এই সিয়াং নদী ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, চিন সরকার এই জ্যাংবো নদীর উপরেই বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করেছে। ব্রহ্মপুত্রের উপরে এর আগেও একাধিক ছোট–বড় বাঁধ তৈরি করেছে বেজিং। তবে নতুন এই বাঁধটি সেগুলোর তুলনায় অনেকটাই বড় হতে চলেছে। সেদেশের জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। চিনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ইয়্যান ঝিয়াং গত সপ্তাহে হওয়া এক সম্মেলনে বলেন, ‘ইতিহাসে এমন প্রকল্পের উল্লেখ নেই। চিনের জলবিদ্যুৎ শিল্পে এ এক ঐতিহাসিক সময়। এটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও পরিবেশ সংরক্ষণ, জাতীয় নিরাপত্তা, জীবনযাপনের মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
নদীর অবস্থানের দিক থেকে বিচার করলে চিন ভারতের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তিব্বত অঞ্চল চিনের দখলে থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম নদীগুলিকেও নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ রয়েছে তাদের কাছে। এই নদীগুলির ৪৮% জলই ভারতের মধ্যে দিয়ে বয়। সম্প্রতি চিনের এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ব্রহ্মপুত্রের জলও অনেকটাই কমে যাবে বলে ধরে নেওয়া যায়। তার উপর বর্ষার সময় বাঁধের জল ছাড়া হলে অসম সহ বাংলাদেশের একাধিক এলাকা প্লাবিত হতে পারে।