
মনোজ মাইতি, শারীরবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক, বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয়
প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত দ্রুততম ও যান্ত্রিক যুগে মানব জাতি ক্রমশ এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। উন্নতির উন্নতিতে লক্ষ্যমাত্রা ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। প্রযুক্তি দ্বারা ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আই.ভিএফ যার মাধ্যমে শুক্রানু দান, ভালো মানের শুক্রাণু নির্বাচন এবং দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটানো। মা অথবা বাবার কারণে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম স্ত্রীর সন্তান হওয়ার সাফল্যলাভ সংঘটিত হচ্ছে। দ্রুততম যুগে যেখানে পুরুষ, মহিলা উভয়ই সমান ভাবে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সেখানে পুরুষ সন্তান অথবা মহিলা সন্তান উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সরকারিভাবে তৃতীয় লিঙ্গ ব্যক্তিরাও সরকারি ও সামাজিক সমান অধিকার পাওয়ার পথে। গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে শহরের সব মানুষের মধ্যে এখনও অজানা বিষয় হলো সন্তানের লিঙ্গ জিনগতভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
মানুষের শরীরে গঠনগত ও কার্যগত একক হল কোষ বা সেল। প্রতিটি সজীব কোষের বাইরের আবরণ বা প্লাজমা পর্দা পর্দা এর ভেতরে অর্ধ কঠিন, জেলির মত পদার্থ প্রোটোপ্লাজম অবস্থিত। প্রোটোপ্লাজম এর প্রধান দুটি উপাদান মধ্যবর্তী স্থানে গোলাকার ঘন অংশ নিউক্লিয়াস এবং বাকি অংশের সাইটোপ্লাজম, যার মধ্যে বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণু যথা সরবরাহকারী বা শক্তি ঘর মাইট্রোকন্ডিয়া, প্রোটিন কারখানা বা রাইবোজোম, আত্মঘাতী থলি বা সুইসাইড ব্যাগ বা লাইসোজোম ইত্যাদি। কোষের নিউক্লিয়াস কোষের মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ কোষের জৈব-রাসায়নিক কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে বা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত দুটি অংশ ক্রোমোজোম গঠন করে যার মধ্যে ডি.এন.এ ও হিস্টোন প্রোটিন অবস্থিত। ডি.এন.এ দ্বিতন্ত্রী যার মধ্যে অবস্থিত জিন যা বংশগত বৈশিষ্ট্য এক কোষ থেকে অন্য কোষে তথা এক বংশ থেকে অন্য বংশের সঞ্চালন করে থাকে। মানবদেহের নিউক্লিয়াসে দুইরকম ক্রোমোজোম তথা অটোজোম সংখ্যায় (AA) 44 এবং সেক্স ক্রোমোজোম সংখ্যা দুটি (XY) অবস্থিত। দেহ কোষের ক্রোমোজোমকে অটোজোম এবং জনন কোষের ক্রোমোজোমকে সেক্স ক্রোমোজোম বলে। সেক্স ক্রোমোজোম দুই প্রকার যথা X ও Y। ক্রোমোজোম জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। পুরুষ ও মহিলার উভয়ের দেহকোষে ক্রোমোজোম একই প্রকারের অপরপক্ষে পুরুষের সেক্স ক্রোমোজোম স্বাভাবিক অবস্থায় XY এবং মহিলার XX প্রকারের হয়ে থাকে। শুক্রাণু বা শুক্রকোষ এবং ডিম্বাণু বা ডিম্বকোষ গ্যামেট হিসাবে পরিচিত। ফার্টিলাইজেশন বা নিষেক পদ্ধতি শুক্রাণু ও ডিম্বাণু কোষগুলি মিলিত হয়ে জাইগোট গঠিত হয় যা থেকে ভ্রূণ, শিশুর জন্ম হতে সময় লাগে প্রায় 270 দিন।
গ্যামেট যথা শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। পুরুষ দেহের প্রধান গোনাড বা জনন অঙ্গ শুক্রাশয় ও স্ত্রী দেহের প্রধান যৌনাঙ্গ গোনাড ডিম্বাশয়। শুক্রাশয় এর মধ্যে শুক্রাণু ও ডিম্বাশয়র মধ্যে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। শুক্রাণু দুইরকম ক্রোমোজোম যুক্ত হয়ে থাকে যথা 22 + X এবং 22 + Y। ডিম্বানুর একটি ক্রোমোজোমের প্রকার যথা 22 + X। 22 + X ডিম্বাণু যদি 22 + X ক্রোমোজোম শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হয় উৎপন্ন জাইগোট ক্রোমোজোম 44 + XX তখন কন্যা সন্তান হয়ে থাকে অপরপক্ষে 22 + X ডিম্বাণু 22 + Y ক্রোমোজোম যুক্ত শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হয় তখন জাইগোট 44 + XY। অর্থাৎ 22 + Y এবং 22 + X ক্রোমোজোম যুক্ত শুক্রাণুর প্রভাবে যথাক্রমে পুত্র ও কন্যা সন্তান হয়ে থাকে। পুত্র সন্তানের জন্য দরকারি শুক্রাণু 22 + Y ক্রোমোজোম যুক্ত, যা পুরুষ দেহে একমাত্র উৎপন্ন হয়ে থাকে বা পুরুষ দেহে থাকে।
বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া ও ভিন্নধর্মী টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ও স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক সচেতনতা ঘটলেও এখনো অনেক মায়েদের ক্ষোভের শিকার হতে হয় আত্মহত্যা, অত্যাচার, বর্তমান সমাজে ও ঘটতে দেখা যায় প্রায়ই, তাইসমস্ত শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে মানবিকতার বিকাশ এখনো ঠিক ভাবে গঠিত হয়েছে কিনা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়।
প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ একটি সক্রিয় ডিম্বাণু, ব্যতিক্রম দুটি ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। ফার্টিলাইজেশন সময় কয়েক লক্ষ শুক্রাণুর মধ্যে মাত্র একটি শুক্রাণু স্ত্রী ডিম্বনালিতে একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে সক্ষম হয় যার কারণে জাইগোট বা ডিপ্লয়েড দেহ কোষ এবং ক্রমপর্যায সন্তান হয়ে থাকে। সক্রিয় শুক্রাণুর টি কি ক্রোমোজোম যুক্ত হবে সেই নিয়ে এখনও বিভিন্ন মতামত থাকলেও সঠিক সিদ্ধান্ত এখনও পাওয়া যায়নি অর্থাৎ কন্যা ও পুত্র সন্তানের কারণ পুরুষদের X, Y ক্রোমোজোম দায়ী প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু কোন উপাদান সক্রিয় শুক্রাণু X বা Y যুক্ত হবে তা এখনও গবেষণার মধ্যে রয়েছে।