নিউজপিডিয়া ডেস্ক, ১৩ জুলাইঃ দীর্ঘদিন জেলবন্দি রয়েছেন তেলুগু ভাষার প্রবীণ কবি ভারভারা রাও। এবার তাঁর প্রাণ বাঁচানোর আর্জি জানাল পরিবার। রবিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে অংশ নেন অশীতিপর কবির স্ত্রী পি হেমলতা ও কন্যারা। ভিডিও বৈঠকে তাঁদের দাবি, নভি মুম্বইয়ের তালোজা সংশোধনাগারে বন্দি কবির শারীরিক অবস্থা বর্তমানে খুবই সঙ্কটজনক। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ তাঁর উন্নত চিকিৎসা করছে না বলে অভিযোগ। কবিকে দ্রুত উন্নত হাসপাতালে ভর্তি করা হোক অথবা পরিবারের হাতে তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। হেমলতা বলেন, ‘‘অনুগ্রহ করে জেলের মধ্যেই কবিকে মরতে দেবেন না।’’
কবিকে দ্রুত উন্নত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাপারে মহারাষ্ট্র সরকার ও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে আর্জি জানিয়েছেন ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক প্রমুখ। এনিয়ে তাঁরা আগেও সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন।
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ২০১৮ সালে গ্রেফতার করা হয় ভারভারাকে। বেশ কয়েক বার জামিনের আর্জি জানানো হলেও তা খারিজ হয়ে যায়। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতেও গত ২৭ জুন রাওয়ের জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যায়। এ দিন রাওয়ের পরিবার জানিয়েছে, গত ২৮ মে জেল থেকে তাঁকে জে জে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিন দিন পরে ফের তাঁকে জেলে ফেরত পাঠানো হয়। গত ২৪ জুন ও ২ জুলাই জেল থেকে ফোনে বাড়িতে কথা বলার সময় পরিবারের সদস্যরা লক্ষ করেন, প্রবীণ কবি অসংলগ্ন কথা বলছেন। এমনকি তেলুগুভাষী কবি হিন্দিতে কথা বলছেন। শনিবার ফোনে কথা বলতে গিয়ে বিপদ টের পান তাঁরা। তাঁরা জানান, কবি শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে অসংলগ্ন কথা বলছিলেন। তিন-চার দশক আগে তাঁর বাবা-মায়ের শেষকৃত্যের বিবরণ দিচ্ছিলেন। কবির এক সহ-বন্দি ফোনে জানান, কবি প্রচণ্ড অসুস্থ। তিনি উঠতে পারছেন না, এমনকি শৌচাগার যেতে বা দাঁত মাজতেও পারছেন না। কবির পরিবার জানায়, কবির স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। তার ফলে ব্রেনের ক্ষতি হতে পারে।
কবি জায়া হেমলতা বলেন, “তালোজা জেল হাসপাতালের এই ধরনের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। তাই দ্রুত উন্নত হাসপাতালে কবিকে ভর্তি করানো দরকার।”
তালোজা জেলের তরফে জানানো হয়েছে, কবিকে জেলের ভিতরেই হাসপাতাল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ভারভারার আইনজীবী নিহালসিং রাঠোর জেল সুপারিটেনডেন্টের কাছে মেডিক্যাল রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি, ভিডিও কলের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। গত মাসেই বিশেষ আদালতে কবির অভ্যন্তরীণ জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। তা খারিজ হয়ে যায়। এই অবস্থায় কবির শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা।
এদিকে জেলবন্দি কবিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী। এনিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিলেন কংগ্রেস নেতা। প্রধানমন্ত্রীকে অধীর চৌধুরী লিখেছেন, “এদেশে ৮১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি জানেন না কী তাঁর অপরাধ, অথচ বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি। এখন চিকিৎসাটুকুও ঠিকভাবে না পেয়ে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁর নাম কবি ভারভারা রাও।” কংগ্রেস নেতা আরও লেখেন, “দয়া করে তাঁকে জেল থেকে মুক্তি দিন, তাঁকে মুক্তি দিন, এই বয়সে তিনি ভারতে এভাবে থাকতে পারেন না”।