বিশেষ সংবাদদাতা: একসময় যারা ঘরে ফিরতে মরিয়া হয়েছিল, এখন তাঁরাই আবার ফেরত যেতে চাইছেন। এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্থানে। ফিরে আসা পরিযায়ীরা আবার তাঁদের কর্মস্থলে ফিরতে চাইছেন। তাঁদের মতে এলাকায় কাজের অভাব রয়েছে।
ভগবানগোলা ২ কম্যুনিটি ব্লকের মেডিক্যাল অফিসার ডঃ উৎপল মজুমদার জানিয়েছেন, শত শত পরিযায়ী শ্রমিক নাশিপুর হাসপাতালে নিজেদের ফিটনস সার্টিফিকেট নিতে আসছেন, যাতে তারা কাজে ফিরতে পারেন। যাদের শরীরে কোনও করোনার চিহ্ন নেই, তাদেরকেই সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। আর যাদের শরীরে করোনার লক্ষন রয়েছে, তাদের টেস্ট করে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, অনেক বেসরকারি সংস্থা শ্রমিকদের ফেরাতে রীতিমত যানবাহন পাঠাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সোমবার সুতি থেকে প্রায় ৬০ জন শ্রমিক বাস ভাড়া করে ওড়িশায় গিয়েছেন। রহমান মিঞা জানিয়েছেন, কোম্পানির দেওয়া বাসে ১৬ এপ্রিল তারা বাড়ি ফিরেছিলেন, আবার তাদের বাসেই কাজে ফিরে গিয়েছেন তারা।
সামশেরগঞ্জের ঠিকা মজদুরের কাজ করা জাফিকুর জানান, কেরালায় নির্মাণকর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখানে দৈনিক ৮০০ টাকা মিললেও এখানে একই কাজে ২০০ টাকা দিতে চাইছে। সেই কারণে তিনি দ্রুত ফিরে যাওয়ার কথা জানান।
সীমান্ত লাগোয়া লালগোলা ব্লক থেকেও নির্মাণকাজে যুক্ত শ্রমিকরা ইতিমধ্যে কর্মস্থলে ফিরে যেতে শুরু করেছেন। গত রাতেও পাইকপাড়া অঞ্চলের অনেকে গাড়ি ভাড়া করে কাজে যোগ দিতে বাড়ি ছেড়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও অনেক শ্রমিক ফিরে যাবেন।
বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতি। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বলেছে যে, মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ীদের ফেরত যাওয়া থেকে আটকাতে চাইছেন না, কারণ রাজ্যে কাজের ব্যবস্থা নেই, সেটা পরিস্কার হয়ে যাবে।
অপরদিকে শাসক দলের দাবি, করোনা মহামারী অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় মানুষ কাজে ফিরে যাচ্ছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের মোশারেফ হোসেন জানিয়েছেন, প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ ঘরে ফিরেছিলেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অনেকেই তাঁদের কাজে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ হাজার মানুষ ট্রেনে, বাসে ও গাড়ি করে ফিরে যাচ্ছেন। অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন যে, বাইরের মতো বাংলায় ভালো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। সভাধিপতির ব্যাখ্যা, রেশন দোকানের সামনে লম্বা লাইন কমার অর্থ মানুষ রোজগার করতে শুরু করেছেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক সিরাজ ধ্যানেশ্বর বলেন, “প্রশাসন মনরেগার অধীনে সকলের জন্য ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা চালালেও কেউ তাদের পুরনো কর্মস্থলে ফিরে গেলে প্রশাসনের করার কিছু নেই।”
প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞ অমল মুখোপাধ্যায়ের মনে করেন, ‘মানুষ নিজ রাজ্যে কাজ না পেয়েই ভিন রাজ্যে বা বিদেশে পাড়ি জমান। পরিযায়ীদের ফেরত যাওয়া প্ৰমাণ করে, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের দাবি অনেকটাই বাহ্যিক। তৃণমূল আমলে রাজ্যে কোনও শিল্প হয়নি আবার কর্মসংস্থান তৈরির নিরিখেও বাংলা পিছনের সারিতে- মন্তব্য অমল মুখোপাধ্যায়ের।